নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলনের (২০২৫)’ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে প্রায় সাড়ে আটশ উপজেলা, জেলা এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা অংশ নেন।
সিইসি বলেন, কমিশন বহু দৃশ্যমান (সিন) এবং অদৃশ্যমান (আনসিন) বিষয় নিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ না করার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বেআইনি কোনো নির্দেশনা ইসি থেকে দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচন বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই বিশেষভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
নাসির উদ্দিন বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো বেআইনি, অন্যায় নির্দেশনা দেবো না৷ আপনারাও (কর্মকর্তারা) কোনো দলের পক্ষে কাজ করবেন না।
সিইসি বলেন, আমি পরিবারের প্রধানের জায়গায় থেকে দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশের মতো জায়গায় কাজ করা খুব কঠিন। আমরা অনেক দেখা, অদেখা বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। অনেকগুলো দেখা যায়। অনেকগুলো দেখ যায় না। আমি পজিটিভ মানুষ। গ্লাসে আমি সব সময় অর্ধেক ভরা পানি দেখি।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর আস্থা আছে বলেই প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন—ঐতিহাসিক নির্বাচন করবো। আমরা অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী না হয়ে, আইন মেনে কাজ করবো। আমরা অন্যায় নির্দেশনা দেবো না। বেআইনি নির্দেশনা, কারও পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেবো না। সঠিক কাজটি, সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেবো।
নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য এ সময় তিনি কর্মকর্তাদের হাত তুলে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে শপথ করতে বলেন। কর্মকর্তারা হাত তুলে সে শপথ করেন।
সিইসি বলেন, আপনারা কারও পক্ষে কাজ করবেন না। কোনো দলের পক্ষে কাজ করবেন না। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষভাবে, বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই কাজ করতে হবে। আমাদের শপথ রক্ষা হবে আপনাদের ভূমিকার ওপর।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কমিশনের কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে। তবে তাদের সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের দাবি পূরণ হবে। তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে। তবে কর্মকর্তাদেরও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন শক্ত মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কারো প্রতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করছে না। এখানে সবাই পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, জুলাই আন্দোলন হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ পচা নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আমরা সময়ের ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছি। তার এক নম্বর কারণ নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া। যেসব কারণে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে তার প্রধান কারণ দেশে ভালো নির্বাচন না থাকা। চোখ বন্ধ করে দেখেন জুলাই আন্দোলন কেন হলো তার প্রধান কারণ পচা নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসন।
মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আমরা আর কখনও পচা নির্বাচন করব না। পক্ষাপাতমূলক বাজে নির্বাচনের জন্য ইসি আপনাদের চাপ দেবে না, ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলবে না। নির্বাচনে যদি কেউ অনিয়ম করে, তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে ইসি কোনো দায়িত্ব নেবে না।
নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, জেন্ডারবান্ধব নির্বাচন করব। নারীদের আমরা গুরুত্ব দেব। কেননা, ওই একদিনই কেবল নারীরা বিশেষ গুরুত্ব পায়। সমান অধিকার পায়।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা এবারের নির্বাচন নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিয়ে যেতে চাই। এআই এর অপপ্রয়োগ এবং প্রবাসী ও দেশের ভেতরে পোস্টাল ভোটিং বড় চ্যালেঞ্জ এবার। এছাড়া বদলির বিষয়ে তদবির না করতেও কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান সচিব।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মনির হোসেন এ সময় প্রবাসে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার কার্যক্রমে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে মাঠ পর্যায়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি।
মনির হোসেন বলেন, এআই নির্ভর মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন বা ম্যালইনফরশেন সাধারণ একটি নির্দিষ্ট এইজ গ্রুপ জড়িত থাকে। বিশেষ করে স্কুলে, কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের নিয়ে আমরা ওয়ার্কশপ করতে পারি।
প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদের আপগ্রেডেশন প্রয়োজন। কেননা, একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ যদি অন্যান্য দপ্তরের চেয়ে পদমর্যাদায় কম হয় তাহলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের পদ পর্যাদা আরও আরও উন্নীত করা প্রয়োজন। এতে মন্ত্রী পর্যায়ের সঙ্গে ইসির যোগাযোগ সহজ হবে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পদে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিলে আচরণবিধি প্রতিপালন আরও সহজ হবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান বলেন, কমিশন যদি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ায় আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াবো। আমাদের সংকট আস্থার সংকট। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হারানো আস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। গত তিনটি নির্বাচনের মতো নির্বাচন করতে চাই না।