নিজস্ব প্রতিবেদক :
অর্থনীতিবিদ সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পরে সংস্কার প্রসঙ্গে এত বেশি কথা হয়েছে, যা বিগত ৫৪ বছরেও হয়নি। সংস্কারটা ঠিক কোন জায়গায়, কীভাবে হবে, এখন পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে নোঙর ট্রাস্টের আয়োজনে ‘আন্তসীমা নদী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কার প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সংস্কারটা ঠিক কোন জায়গাটায়, কীভাবে হবে, এটা আমরা এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে দেখিনি। একমাত্র সংবিধান নিয়ে সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট আলোচনা আমরা দেখতে পাই, এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে সংস্কারের কোনো প্রকৃত উদ্যোগ আমরা দেখিনি। নদী নিয়ে তো কোনো সংস্কার কমিশনই হয়নি। অথচ নদী হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের অংশ এবং অস্তিত্বই থাকবে না যদি নদী না থাকে।
সরকার নদী নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ তোলেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সরকারের একটা সহজ কাজ ছিল নদী নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সংযুক্ত করা, ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করা। সরকার এসব কাজ করতে পারেনি। ভারত যেহেতু এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি সেহেতু বাংলাদেশের করা উচিত।
আনু মুহাম্মদ বলেন, অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের উপর সবারই অধিকার আছে। এই প্রবাহের ওপর কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। বাংলাদেশে নদী নিয়ে কখনো আমরা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ পাইনি। শুধু ১৫ বছরের না, ৫৪ বছরের সমস্যা। ৫৪ বছর ধরে যে সমস্ত দল সরকারে এসেছে বা দলের বাইরে যারা সরকারে এসেছে-মাঝে মধ্যে কিছু উদ্যোগ হলেও নদী নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ পাইনি। যৌথ নদী কমিশন কেন কাজ করে না? শুধু যৌথ নদী কমিশন নয়, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যে যেসব কমিটি বা কমিশন হয় অন্যান্য দেশের সঙ্গে বা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে দর কষাকষি বা আলোচনার জন্য, সেখানে আমাদের প্রস্তুতি, দক্ষতা, সক্ষমতার বড় একটা ঘাটতি দেখা যায়। আমাদের দেশের সরকারগুলোর একটা অভিন্ন প্রবণতা দেখা যায়—তারা সবসময়ই আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে, যেমন: বিশ্বব্যাংক, এডিবি ইত্যাদি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নদী বিপর্যয়ের তিনটি বড় কারণ রয়েছে। একটি হলো ভারত, বাকি দুটি আমাদের নিজেদের। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নদী ধ্বংস এবং ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর দখলদারি। অথচ এসব বিষয়ে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেই। দেশের ভেতরে নদী দখল ও দূষণে জাতীয় ঐক্য থাকলেও উদ্ধারে ঐক্য নেই।
আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে যৌথ নদী কমিশন কেন কাজ করে না? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কিংবা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনায় সব সময় আমাদের দিক থেকে ঘাটতি দেখা যায়। সরকারগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল। নদী নিয়ে যে ডেলটা প্ল্যান হচ্ছে, সেটিও নেদারল্যান্ডসের একটি গোষ্ঠী করে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছেন। বর্তমানে ভারতে বাঁধ ভাঙার দাবিও উঠছে। সুতরাং, ভারতের নাগরিক সমাজের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তৈরি করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস। এতে প্রস্তাব করা হয়, নদীগুলোকে রক্ষা করতে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করা এবং নদী সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করার। ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—নৌপথের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নদী রক্ষায় ভাবচেতনতা বৃদ্ধি করা। এটি সাধারণ মানুষকে নদীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনুপ্রাণিত করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাহবুব সিদ্দিকী, শেখ রোকন, তোফায়েল আহমেদ, মিহির বিশ্বাস, হালিমদাদ খান, কামরুজ্জামান ও শর্মিলা খানম।