সুনামগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
দেশের তিন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে ও মা-মেয়েসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ, রংপুর ও বগুড়ায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য প্রতিবেদন:
সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সাড়ে ৭টার দিকে শান্তিগজ উপজেলার পাগলাবাজার এলাকার বাঘেরকোনাস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা আখি চৌধুরী (৪২) ও তার মেয়ে প্রথমা চোধুরী (১৫)। প্রথমা চৌধুরীর বাবা নাম প্রণয় দাস। তারা হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নবীপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। অপর নিহত হলেন, শহরের নবীনগর এলাকার সজল ঘোষ (৫০)।
স্থানীয়রা জানায়, সকালে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট যাচ্ছিল একটি সিএনজি অটোরিকশা। বাঘেরকোনা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় সিএনজি যাত্রী কেশবা প্রিয়া ও চালক সজল ঘোষের। গুরুতর আহত কেশবা প্রিয়ার মেয়ে প্রথমা চৌধুরীকে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো আব্দুল আহাদ জানান, পিকআপ-সিএনজি সংঘর্ষে মা মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তেরর জন্য পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া:
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি কাঠালতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কুঠিবাড়ি গ্রামের বিপুল চন্দ্র দাস (৩৮), তার ছেলে বিপ্লব চন্দ্র দাস (৫) এবং অটোরিকশা চালক শিবগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের শুকুর আলী (৪০)। আহতরা হলেন- বিপুলের স্ত্রী মমতা রানী ও মেয়ে রুপা মনি দাস।
সারিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামিরুল ইসলাম জানান, দুর্গাপূজার ছুটিতে বিপুল পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়ি আসছিলেন। ভোরে ঢাকা থেকে বাসে বগুড়ায় নেমে অটোরিকশা যোগে নারচী গ্রামে যাচ্ছিলেন তারা। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক শুকুর আলী মারা যান। পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টার দিকে বিপুল ও তার ছেলে বিপ্লবের মৃত্যু হয়। আহত মমতা রানী ও রুপা মনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওসি আরও জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকচালক ও সহকারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। ট্রাকটি পুলিশের হেফাজতে আছে। নিহতদের লাশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রংপুর
রংপুর নগরীর দমদমা ব্রিজের কাছে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে বালু বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুজন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের তাজহাট থানার দমদমা ব্রিজের উত্তর প্রান্তে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পিকআপের হেলপার রংপুরের তাজহাটের নগর মীরগঞ্জ এলাকার ইউসুফের ছেলে আরিফ (২০), যাত্রী পীরগাছার সাতদরগা এলাকার মোতালেব হোসেনের স্ত্রী যাত্রী শাহিনা (২৮) এবং তার ছেলে ওয়ালিদ ওরফে স্বাধীন (১)। গুরুতর আহত পিকআপ চালককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পিকআপের চালক গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ট্রাকের চালক ও সহকারী দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ইউটার্ন নেওয়ার সময় সড়কের গতিসীমা ও সিগন্যাল না মানার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোরের দিকে পিকআপটি মহিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। সে সময় ইউটার্ন নেওয়ার মুহূর্তে দ্রুতগতির ট্রাকটি সামনে এসে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনাটি এতটাই তীব্র ছিল যে পিকআপটি রাস্তার এক পাশে ছিটকে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই আরিফ, শাহিনা ও শিশু ওয়ালিদের মৃত্যু হয়। মহাসড়কের ওই অংশে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, বিশেষত ভোর ও রাতের সময়।
দ্রুতগতির যানবাহন এবং অসাবধানতার কারণে এমন ঘটনা বাড়ছে বলে জানান তারা।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার ওসি মো. শাহজাহান আলী বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দমদমা ব্রিজের উত্তর প্রান্তে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহিগঞ্জগামী একটি মালবাহী পিকআপ মহাসড়কে ইউটার্ন নেওয়ার সময় ঢাকা অভিমুখে আসা একটি বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পিকআপটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন।
তিনি আরো বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।