রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটের বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন শ্রমিকরা। ন্যায্য বেতনের দাবিতে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব পরিবহনের যাত্রীরা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রামীণ ট্রাভেলস ও শ্যামলী ট্রাভেলসের কর্মীরা বাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্মসূচি পালন করছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বরের পর এটি একই দাবিতে দ্বিতীয়বারের মতো বাস বন্ধের ঘটনা। তবে একতা পরিবহন ও কয়েকটি লোকাল বাস চলাচল করছে।
রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন রহিদুর রহমান। তিনি বলেন, দুপুর ১২টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু এসে শুনি বাস বন্ধ। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেনের টিকিটও কাটা সম্ভব না। কয়েকটি কোম্পানির বাস চলছে, কিন্তু সেগুলোর টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে ঢাকাগামী বাসে আপ-ডাউন একটি ট্রিপে চালক পান মাত্র ১,২০০ টাকা, হেলপার পান ৬০০ টাকা এবং সুপারভাইজার পান আরও কম। এই সামান্য আয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের মূল দাবিগুলো হলো, আপ-ডাউন একটি ট্রিপে চালকের বেতন ২ হাজার টাকা, সুপারভাইজারের বেতন ১ হাজার ১০০ টাকা এবং হেলপারের বেতন ১ হাজার টাকা করতে হবে। হোটেল ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা এবং প্রতিবার খাবারের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা দিতে হবে। প্রতি বছর বোনাস দিতে হবে।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নাটোরের অনেক কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়। ঢাকাগামী যাত্রীরা নাটোর বাসট্যান্ডে এসে দুর্ভোগে পড়েন। দুর্ভোগ থাকলেও যাত্রীরা বলছেন শ্রমিকদের এই দাবি যৌক্তিক।
যাত্রী শামীম আহমেদ বলেন, জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে। ছোট ভাইকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে বসে আছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
আরেক যাত্রী মানিক জানান, বাস বন্ধ থাকায় ফিরে যাচ্ছেন তিনি। তবে শ্রমিকদের দাবি সঠিক বলে মনে করেন তিনি।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের হেলপার রেজা বলেন, আমরা এক ট্রিপে ৬০০ টাকা পাই। খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে মাত্র ৪০০ টাকা। মাসে ১৪টি ট্রিপ করলে আয় হয় ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চালানো কষ্টকর।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক আলী হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ বছর ধরে আমাদের ১ হাজার ১০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। গত ২৩ আগস্ট বাস বন্ধ করলে মালিকপক্ষ বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছেন। আমরা আবারও মালিকদের সঙ্গে বসব। একতার চালক পায় ১ হাজার ৭৫০ টাকা, আর অন্য বাসের চালক পায় ১ হাজার ২৫০ টাকা। মালিকরা বারবার বেতন বাড়াতে চেয়েও বাড়াচ্ছেন না। তাই চালকরা বাস বন্ধ করে দিয়েছে।
মালিকপক্ষ জানিয়েছে, শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর দ্রুতই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।