নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্র প্রতিনিধিদের সরকারের দায়িত্বে আসাটা তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয় না। দায়িত্বে না এলে তারা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থাকতে পারতো।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘তারুণ্যের রাষ্ট্রচিন্তা’র তৃতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চায় পৃথিবীতে একইসাথে কেউ সরকারি দল ও বিরোধী দলে থাকতে পারে না। যেদিন ছাত্র প্রতিনিধিরা সরকারে গেলো, সেদিন আমি বুঝে গেলাম এরা রাষ্ট্র নির্মাণে আর ভূমিকা রাখতে পারবে না। আমি তাদের সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে তো হবে না, তাগিদটা তাদের অনুভব করতে হবে।
এসময় জামায়াত নেতাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, আপনাদের এক নেতা বললেন, কে সরকারি দল হবে, কে বিরোধী দল। তাহলে এটা আপনারা নিজেরা ঠিক করে নিয়েছেন, নাকি জনগণ ঠিক করবে? এতো কনফিডেন্স থাকলে নির্বাচনে আসেন না কেন? নানা বাহানায় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন?
সালাহউদ্দিন বলেন, আলোচনার মধ্যে আপনারা রাস্তায় নামলেন। আলোচনার টেবিল ও আন্দোলন একসাথে চললে সেটা হবে স্ববিরোধীতা। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়েই তো আমরা আলোচনা করছি। আমরা আলোচনায় সমাধান চাই।
নতুন কোনো সংকট তৈরি না করি, ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো দল কোনো কোনো দাবি করতেই পারে, কিন্তু সেটা জাতির ওপর জবরদস্তি করা ঠিক নয়। আমরা যেন পরস্পর জবরদস্তি না করি। যে পরিবর্তন আমরা করতে চাই, সেটা রাতারাতি হবে না। আসুন আমরা নতুন কোনো সংকট তৈরি না করি, ঐক্য ধরে রাখি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ত্রয়োদশ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে। যারা পিআর নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের ভোটে জিতে এসে তা কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি।
পিআর নিয়ে আন্দোলনরত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইশতেহার দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন করুন। নৈরাজ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হলে লাভবান হবে অসাংবিধানিক শক্তি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আপনারা যখন এত বেশি আত্মবিশ্বাসী, যে সরকারি দল হবেন। তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? আজকে এই বাহানা, কালকে ওই বাহানা, পরশু আরেক বাহানা দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্য কি সেটা তো আমরা জানি।
তিনি বলেন,বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কালকে কয়েকটা সমাবেশ হয়েছে সারাদেশে, বিভিন্ন বিভাগ পর্যায়ে। পত্রিকায় আজ হেডলাইন দেখলাম, কোথাও বলছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করবে, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে। তো ভাইসাব আপনারা কি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে নাকি জনগণ করবে? কিন্তু আমার জবাব হলো আপনারা যখন এত বেশি আত্মবিশ্বাসী, যে সরকারি দল হবেন। তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? আজকে এই বাহানা, কালকে এই বাহানা, পরশু আরেক বাহানা দিয়ে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্য কি সেটা তো আমরা জানি।
সব রাজনৈতিক দল এবং দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আসুন, আমরা কোনো সংকট সৃষ্টি না করি এবং সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমাদের ফ্যাসিস্টবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছে, সেটাকে আমরা সমুন্নত রাখবো এবং এটাকেই শক্তিতে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ। গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে পারবো এবং তাহলেই আমরা সফলকাম হবো।
সালাহউদ্দিন বলেন, ঐকমত্য কমিশনে যদি ঐতমত্য পোষণ না হয় তাহলে যেভাবে প্রচলিত বিধিবিধানসম্মত হবে সেভাবেই হবে। এখানে যেন আমরা পরস্পর জবরদস্তি না করি। যে পরিবর্তনগুলো আমরা সামনের দিনে আনতে চাচ্ছি সেটা রাতারাতি হবে না। সেটার জন্য সময় দরকার পর্যায়ক্রমভাবে যাওয়া দরকার। একটা গণতন্ত্রবিহীন অবস্থা থেকে আমরা যে জায়গায় আসতে পেরেছি, ইনশাআল্লাহ এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ, শহীদের প্রত্যাশা পূরণ, জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো। আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা আছে একটা বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করতে পারবো।
জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদের মন্তব্য তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, রওশন এরশাদ বলেছিলেন, মাননীয় স্পিকার আপনি বলে দেন, আমি সরকারি দল না বিরোধী দল। এরকম কোনো চর্চা যেন আমরা ভবিষ্যতে না করি।
বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের আন্দোলনের সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, আলোচনা টেবিলে চলমান থাকা অবস্থায় মাঠে আন্দোলন করাটা স্ববিরোধী।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, অনেকে বলছে, এ সরকার পুরোপুরি সাংবিধানিকও না আবার বলছে এটা পুরাপুরি বিপ্লবী সরকারও না বলছে এটা মাঝামাঝি সরকার। আমি বললাম এটা নির্ধারণ হওয়া দরকার, এক বছর পরে এসে তারা কেন এ প্রশ্ন তুলছে, তার পেছনে একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে, এ ধরনের প্রশ্নের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক সংকট যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে বেনিফিশিয়ারি কে হবে? কোন অসাংবিধানিক শক্তি। বেনিফিশিয়ারি হবে পতিত স্বৈরাচার।
নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা রাষ্ট্রকে সেই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি কেন? প্রশ্নগুলো তুলে এই সংবিধানকে এই সরকারকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার সরকার কি না সেই প্রশ্ন যদি আজ উত্থাপন করা হয় তাহলে তাদের মতলব আলাদা।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধান গলদ আমরা সবাই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে চাই। কিন্তু উন্নত বিশ্বে দ্বাদশ শ্রেণির পর সবাই গ্রাজুয়েশন করতে যায় না। গ্রাজুয়েশনের পর যারা রিসার্চ করতে চায়, কেবল তারাই মাস্টার্স করতে যায়।