লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি :
সড়কে হেলেদুলে চলে গাড়ি। মাঝেমধ্যে খানাখন্দে আটকে যায় গাড়ির চাকা। কখনো গর্তের মরণফাঁদে উল্টে যায় গাড়ি। এতে যাত্রীদের কোমর শেষ, গাড়ির চাকা শেষ। তবুও যাত্রীদের গুনতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। সাবেক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বর্তমান সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতায় থাকা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়কটির এখন এমনই হাল।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এই সড়ক দিয়ে উপজেলার চর কালকিনি, চরমার্টিন ও চর লরেন্সের লাখো বাসিন্দা উপজেলা সদর ও লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন। খানাখন্দ আর মাত্রাতিরিক্ত গর্তের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও যাত্রীদের গুনতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। সোজা কথা, সড়কটি এখন জনসাধারণের কাছে গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোগ করতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগও।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট পর্যন্ত ৮.৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ও ১২ ফুট প্রস্থের এ সড়কটি পাকা করা হয়। এরপর কয়েকধাপ ঘষামাজা করা হলেও সর্বশেষ ২০২২ সালের শুরুর দিকে মুন্সীরহাট থেকে মতিরহাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়ক দুই দফায় সংস্কার করে উপজেলা এলজিইডি অফিস। অবশিষ্ট তোরাবগঞ্জ থেকে মুন্সীরহাট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তোরাবগঞ্জ থেকে মুন্সীরহাট বাজারের দিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তোরাবগঞ্জ বাজার থেকে পশ্চিমে আনুমানিক তিন’শ মিটার সড়ক খানাখন্দ আর বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এরইমধ্যে এ তিনশ’ মিটার সড়কের দুইপাশে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে যায় পানি। দেখে মনে হয় ‘সড়ক নয়, যেন মিনি পুকর’। যেন এখানে মাছ চাষ করাও কঠিন কিছু নয়।
বাজার অংশের এ তিনশ’ মিটার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। যে কারণে আপদকালীন বরাদ্দ দিয়ে হলেও এ তিনশ’ মিটার দ্রুত সংস্কার করার দাবি ভুক্তভোগীদের। এছাড়া অবহেলিত আড়াই কিলোমিটারের সড়কের মধ্যে অন্তত অর্ধশত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। বলতে গেলে, ভুক্তভোগীদের কাছে সড়কটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. আলম, নিজাম উদ্দিন, হারুনুর রশিদ ও সাহাদাত হোসেন বলেন, রাস্তাটি ভাঙাচোরা থাকায় প্রতিদিন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। সময় লাগে দ্বিগুণ, তাই ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। রাস্তাটি ভালো হলে ভাড়া আগের মতোই নেওয়া হবে।
স্থানীয় রাজনীতিবীদ ও বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন হাওলাদার, সংবাদকর্মী আবছার উদ্দীন রাসেল, মাছ ব্যবসায়ী রহিম, ও মুদি দোকানি সিরাজ মিয়াসহ অনেকেই বলেন, তোরাবগঞ্জ বাজার থেকে মুন্সীরহাট বাজারে যেতে আগে ভাড়া নেওয়া হতো ২০ টাকা। কিন্তু রাস্তা ভালো না থাকায় এখন গাড়িচালকেরা ৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছেন।
তোরাবগঞ্জ বাজার ইজারাদার গোলাম কাদের জানান, রাস্তাটির এ অবস্থার কারণে বাজারের ক্রেতা আগের চেয়ে কমে গেছে। তাই রাস্তাটি সংস্কার করা খুবই জরুরি।
তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন বাহার বলেন, তোরাবগঞ্জ বাজারের গুরুত্ব বিবেচনা করে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
এলজিইডি কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, বরাদ্দ পেলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।