Dhaka শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খরচ বাড়ায় নতুন ২ মেট্রোরেলে বিকল্প ভাবছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীতে আরো দুটি মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন ও এমআরটি লাইন-১ রুটের পরিষেবা লাইন স্থানান্তর কাজ শুরু হয়েছে। তবে জাপানি ঠিকাদারের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকায় বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এই ব্যয় সরকারের প্রাক্কলনের দ্বিগুণের বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সহায়তায় প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলছে। তবে ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা করেছে।

নির্ধারিত ব্যয়ে জাইকা কাজ করতে আগ্রহী না হলে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

ঢাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে চালু হওয়া লাইন-৬ (উত্তরা থেকে কমলাপুর) এর কাজ শেষ হওয়ার পথে। বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ (কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল) এবং এমআরটি লাইন-৫ (সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর, গুলশান হয়ে ভাটারা)।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

আর এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট)-এর মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী এবং নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। বাকিটা পাতালপথে হবে। ষ্টেশনের সংখ্যা ১৪। ইতোমধ্যে পাওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের খরচ কমানোর বিষয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনার জন্য গত ২৪ আগস্ট থেকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহ টোকিও সফর করে। সফরকালে প্রতিনিধি দল জাইকার প্রেসিডেন্ট ছাড়াও জাপান সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে প্রকল্পের খরচ কমানো নিয়ে আলোচনা করেন। ব্যয় কমানোর জন্য পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে প্রতিনিধি দল দেশের ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট খাত বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। কমিটি অন্যান্য দেশের মেট্রোরেল নির্মাণসহ দেশের পরিপার্শ্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক ব্যয় প্রস্তাব করবে। নির্ধারিত এ ব্যয় জাইকার কাছে উস্থাপন করা হবে। তারা যদি এ ব্যয়ে কাজ করতে রাজি না হয় তাহলে বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশ বা সংস্থার অর্থায়নে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেবে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমনিতেই সরকারের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এরপর এ দুই প্রকল্পে প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে পরে অনেক বাড়ানো হয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ব্যয় হয়তো ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। কিন্তু বেড়েছে আরো অনেক বেশি। তাই এ ব্যয় কমানোর জন্য পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য জাইকাকে বলা হয়েছে। যদি তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা না হয় তাহলে অন্য কোনো দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান  বলেন, এত উচ্চমূল্যে মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব নয় এমনটি জাইকাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাপানের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের ব্যাখ্যা

খরচ বাড়ায় নতুন ২ মেট্রোরেলে বিকল্প ভাবছে সরকার

প্রকাশের সময় : ১২:১৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীতে আরো দুটি মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন ও এমআরটি লাইন-১ রুটের পরিষেবা লাইন স্থানান্তর কাজ শুরু হয়েছে। তবে জাপানি ঠিকাদারের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকায় বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এই ব্যয় সরকারের প্রাক্কলনের দ্বিগুণের বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সহায়তায় প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলছে। তবে ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা করেছে।

নির্ধারিত ব্যয়ে জাইকা কাজ করতে আগ্রহী না হলে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

ঢাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে চালু হওয়া লাইন-৬ (উত্তরা থেকে কমলাপুর) এর কাজ শেষ হওয়ার পথে। বাস্তবায়নাধীন দুটি মেট্রোরেল হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ (কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল) এবং এমআরটি লাইন-৫ (সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর, গুলশান হয়ে ভাটারা)।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর ও কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

আর এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট)-এর মোট দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী এবং নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। বাকিটা পাতালপথে হবে। ষ্টেশনের সংখ্যা ১৪। ইতোমধ্যে পাওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের খরচ কমানোর বিষয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনার জন্য গত ২৪ আগস্ট থেকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহ টোকিও সফর করে। সফরকালে প্রতিনিধি দল জাইকার প্রেসিডেন্ট ছাড়াও জাপান সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে প্রকল্পের খরচ কমানো নিয়ে আলোচনা করেন। ব্যয় কমানোর জন্য পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে প্রতিনিধি দল দেশের ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট খাত বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। কমিটি অন্যান্য দেশের মেট্রোরেল নির্মাণসহ দেশের পরিপার্শ্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক ব্যয় প্রস্তাব করবে। নির্ধারিত এ ব্যয় জাইকার কাছে উস্থাপন করা হবে। তারা যদি এ ব্যয়ে কাজ করতে রাজি না হয় তাহলে বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশ বা সংস্থার অর্থায়নে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেবে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমনিতেই সরকারের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এরপর এ দুই প্রকল্পে প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে পরে অনেক বাড়ানো হয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ব্যয় হয়তো ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। কিন্তু বেড়েছে আরো অনেক বেশি। তাই এ ব্যয় কমানোর জন্য পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য জাইকাকে বলা হয়েছে। যদি তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা না হয় তাহলে অন্য কোনো দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান  বলেন, এত উচ্চমূল্যে মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব নয় এমনটি জাইকাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাপানের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।