Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনার পতনের আগেই ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় : নাহিদ ইসলাম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৪:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৭৯ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গত বছরের ৪ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ২ সদস্যর বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তিনি।

৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ৩ আগস্টেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করব। সে সময় আমরা নতুন সরকারের রূপরেখা নিয়েও পরিকল্পনা শুরু করেছিলাম। সেই প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দেশের এই সংকটে তার সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। তাকে আমরা বলেছিলাম, যদি আন্দোলন সফল হয়, এবং আমরা সরকার উৎখাত করতে পারি, তবে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে হয়তো আপনাকে দায়িত্ব নিতে হতে পারে এমন প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করি। ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করি। সরকার তখন কারফিউ ঘোষণা করে এবং দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। আমরা জানতে পারি, ৬ আগস্টের কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এজন্য আমরা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে। আমরা শাহবাগে অবস্থান করি। শহীদ মিনার ও চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী একপর্যায়ে শাহবাগের রাস্তা ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে ওই এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমরা শুনতে পাই, ঢাকার প্রবেশমুখগুলো দিয়ে লাখ লাখ মানুষ প্রবেশ করছে। আমরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থেকে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেই। পথিমধ্যে খবর পাই, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছে। ওইদিন সারাদেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের খবর পাই।

ট্রাইবুযনালকে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সংবাদ সম্মেলন করে আমরা সমন্বয়করা সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাই। আমরা এও জানাই, কোনও ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন আমরা মেনে নেব না।

তিনি বলেন, পুলিশ ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় ও নির্যাতন করে।

তিনি বলেন, তাকে যে আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল, সেটি তিনি শনাক্ত করতে পেরেছেন। আমাকে গুম করা হয়েছিল, শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হয়েছিল। এমনকি নারী নেত্রীদের গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আমাদের জোর করে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়, সেটি মোবাইলে ধারণ করে মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ‘সমঝোতার’ একটি দৃশ্য ধারণ করে জনগণকে দেখাতে চেয়েছিল সরকার।

তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পর তারা অনশন শুরু করেন এবং রিট ও গণআন্দোলনের চাপে ডিবি অফিস থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যেন আমি আর আন্দোলনে ফিরতে না পারি। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

জুলাই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যে শেখ হাসিনাসহ দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দদের গ্রেপ্তার করে চাপ দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবিত ফেরত চাইলে আন্দোলন প্রত্যাহারের হুমকি দেয়া হয়। এই অবস্থার মধ্যেই ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে হত্যাযজ্ঞের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ ও আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি তুলে ধরা থেকে বিরত থাকে গণমাধ্যম।

ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে সমন্বয়কদের নির্যাতন ও জিজ্ঞেসাবাদের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০ জুলাই রাতে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। পরে তাকে জানানো হয়- তাকে গুম করা হয়েছে, আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে ছাড়া হবে না। তবে ২৪ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ২৬ জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহার করতে জোরপূর্বক লিখিত বক্তব্য পাঠ করিয়ে মোবাইলে ধারণ করে মিডিয়ায় প্রচার করেন তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ।

শেখ হাসিনার মামলায় নাহিদ ইসলাম প্রসিকিউশনের শেষ সাক্ষী। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষ্য দেবেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তারপর যুক্তি-তর্ক উত্থাপিত হবে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত আলোচিত এ মামলায় ৪৭ জনের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নুরকে দেখতে বাসায় গেলেন বিএনপি নেতা আমির খসরু

হাসিনার পতনের আগেই ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় : নাহিদ ইসলাম

প্রকাশের সময় : ০৩:১৪:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গত বছরের ৪ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ২ সদস্যর বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তিনি।

৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ৩ আগস্টেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করব। সে সময় আমরা নতুন সরকারের রূপরেখা নিয়েও পরিকল্পনা শুরু করেছিলাম। সেই প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দেশের এই সংকটে তার সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। তাকে আমরা বলেছিলাম, যদি আন্দোলন সফল হয়, এবং আমরা সরকার উৎখাত করতে পারি, তবে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে হয়তো আপনাকে দায়িত্ব নিতে হতে পারে এমন প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করি। ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করি। সরকার তখন কারফিউ ঘোষণা করে এবং দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। আমরা জানতে পারি, ৬ আগস্টের কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এজন্য আমরা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে। আমরা শাহবাগে অবস্থান করি। শহীদ মিনার ও চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী একপর্যায়ে শাহবাগের রাস্তা ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে ওই এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমরা শুনতে পাই, ঢাকার প্রবেশমুখগুলো দিয়ে লাখ লাখ মানুষ প্রবেশ করছে। আমরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থেকে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেই। পথিমধ্যে খবর পাই, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছে। ওইদিন সারাদেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের খবর পাই।

ট্রাইবুযনালকে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সংবাদ সম্মেলন করে আমরা সমন্বয়করা সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাই। আমরা এও জানাই, কোনও ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন আমরা মেনে নেব না।

তিনি বলেন, পুলিশ ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় ও নির্যাতন করে।

তিনি বলেন, তাকে যে আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল, সেটি তিনি শনাক্ত করতে পেরেছেন। আমাকে গুম করা হয়েছিল, শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হয়েছিল। এমনকি নারী নেত্রীদের গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আমাদের জোর করে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়, সেটি মোবাইলে ধারণ করে মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ‘সমঝোতার’ একটি দৃশ্য ধারণ করে জনগণকে দেখাতে চেয়েছিল সরকার।

তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পর তারা অনশন শুরু করেন এবং রিট ও গণআন্দোলনের চাপে ডিবি অফিস থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যেন আমি আর আন্দোলনে ফিরতে না পারি। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

জুলাই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যে শেখ হাসিনাসহ দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দদের গ্রেপ্তার করে চাপ দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবিত ফেরত চাইলে আন্দোলন প্রত্যাহারের হুমকি দেয়া হয়। এই অবস্থার মধ্যেই ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে হত্যাযজ্ঞের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ ও আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি তুলে ধরা থেকে বিরত থাকে গণমাধ্যম।

ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে সমন্বয়কদের নির্যাতন ও জিজ্ঞেসাবাদের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০ জুলাই রাতে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। পরে তাকে জানানো হয়- তাকে গুম করা হয়েছে, আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে ছাড়া হবে না। তবে ২৪ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ২৬ জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহার করতে জোরপূর্বক লিখিত বক্তব্য পাঠ করিয়ে মোবাইলে ধারণ করে মিডিয়ায় প্রচার করেন তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ।

শেখ হাসিনার মামলায় নাহিদ ইসলাম প্রসিকিউশনের শেষ সাক্ষী। এরপর নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষ্য দেবেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তারপর যুক্তি-তর্ক উত্থাপিত হবে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত আলোচিত এ মামলায় ৪৭ জনের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।