Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরা যা করেছি, তা দেশের ইতিহাসে হয়নি : আইন উপদেষ্টা

সিলেট জেলা প্রতিনিধি : 

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা যা করেছি তা দেশের ইতিহাসে হয়নি। কম সময়ে আমরা যে পরিবর্তন করেছি, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার যদি তা ধরে রাখে, তাহলে দেশে ন্যায়বিচার বৃদ্ধি পাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে ‘জারিকৃত আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫: মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান’ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা যা করছি সেটা দেখতে হবে কাজের মধ্য দিয়ে। আজকে আমরা লিগ্যাল এইডের কথা বললাম। এর বাইরে আমরা অনেক কাজ করেছি, যেটা কোনোদিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে আসিফ নজরুল বলেন, সবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে, যার যা ইচ্ছা, লিখে দেওয়া যায়। আমি প্রায়ই শুনি, “আপনি কী করেছেন? শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে বসেছেন, আমরা আপনাকে বসিয়েছি, আপনি কী করেছেন?” আমি বুঝতে পারি না, আনসারটা কী হবে। আমি ফুটবল প্লেয়ার নই, কিংবা মঞ্চনাটকের অভিনেতাও নই, আমি যেটা করব, আপনি দেখতে পারবেন।

তিনি তার কাজের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে লিগ্যাল এইডের কথা বললাম। এর আগে অনেক কাজ করেছি, যা কোনো দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি। আমরা সিভিল আদালত ও ক্রিমিনাল আদালত পৃথক করেছি, যাতে সিভিল আদালতের নিষ্পত্তি বাড়ে এবং মামলার নিষ্পত্তি দ্রুতগামী হয়। আগে কোনো দিন বাংলাদেশে এটা করা হয়নি।

আসিফ নজরুল আরও দাবি করেন, বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষমতা, যা আগে রাজনৈতিক মন্ত্রীদের হাতে ছিল, তা চিফ জাস্টিসের কাছে নিয়ে গেছি। প্রায় সোয়া দুই শ’ বিচারকের পদ এক দিনে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এমন একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি, যার জন্য বাংলাদেশে সমালোচনা হয়নি। দেওয়ানি কার্যবিধি আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে, যেটা আগে হয়নি।

তিনি বলেন, তার মন্ত্রণালয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে খুঁজে সবচেয়ে সৎ ও যোগ্য অফিসারদের নিয়ে এসেছেন, যারা দিনরাত কাজ করছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা যে পরিবর্তন ও সংস্কার এনেছি, তা রাজনৈতিক সরকার ধরে রাখলে ন্যায়বিচার বৃদ্ধি পাবে। দরিদ্র, অসহায় মানুষ বিনা খরচে দ্রুততম সময়ে আইনগত সহায়তা পাবে।

গত ১ জুলাই আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়িভাড়া, যৌতুক ইত্যাদি তফসিলভুক্ত বিষয়ে সিলেটসহ ১২টি জেলায় মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হচ্ছে।

আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রচলিত আদালতের চেয়ে ১০ ভাগের ১ ভাগ সময় লাগে। প্রচলিত আদালতে যদি পাঁচ বছর লাগে, লিগ্যাল এইডে সেটি নিষ্পত্তি করতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এখানে ৯০ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে, ফলে তারা আর আদালতে যায় না।

লিগ্যাল এইড আগে বাধ্যতামূলক না হলেও এখন মামলার জট কমাতে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ‘আপনাকে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। সেখানে অসন্তুষ্ট থাকলে তবে আদালতে যেতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এটা ঠিকমতো করতে পারলে মামলার জট কমে যাবে এবং মানুষের হয়রানি কমবে,’ বলেন আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শেখ আশফাকুর রহমান, সিলেট জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার দুই প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানের শুরুতে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ে একটি নাটক প্রদর্শন করা হয়।

এর আগে সকালে সিলেট পৌঁছে আইন উপদেষ্টা দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র রাতারগুল পরিদর্শন করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আমরা যা করেছি, তা দেশের ইতিহাসে হয়নি : আইন উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ১২:২২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিলেট জেলা প্রতিনিধি : 

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা যা করেছি তা দেশের ইতিহাসে হয়নি। কম সময়ে আমরা যে পরিবর্তন করেছি, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার যদি তা ধরে রাখে, তাহলে দেশে ন্যায়বিচার বৃদ্ধি পাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে ‘জারিকৃত আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫: মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান’ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা যা করছি সেটা দেখতে হবে কাজের মধ্য দিয়ে। আজকে আমরা লিগ্যাল এইডের কথা বললাম। এর বাইরে আমরা অনেক কাজ করেছি, যেটা কোনোদিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে আসিফ নজরুল বলেন, সবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে, যার যা ইচ্ছা, লিখে দেওয়া যায়। আমি প্রায়ই শুনি, “আপনি কী করেছেন? শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে বসেছেন, আমরা আপনাকে বসিয়েছি, আপনি কী করেছেন?” আমি বুঝতে পারি না, আনসারটা কী হবে। আমি ফুটবল প্লেয়ার নই, কিংবা মঞ্চনাটকের অভিনেতাও নই, আমি যেটা করব, আপনি দেখতে পারবেন।

তিনি তার কাজের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে লিগ্যাল এইডের কথা বললাম। এর আগে অনেক কাজ করেছি, যা কোনো দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি। আমরা সিভিল আদালত ও ক্রিমিনাল আদালত পৃথক করেছি, যাতে সিভিল আদালতের নিষ্পত্তি বাড়ে এবং মামলার নিষ্পত্তি দ্রুতগামী হয়। আগে কোনো দিন বাংলাদেশে এটা করা হয়নি।

আসিফ নজরুল আরও দাবি করেন, বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষমতা, যা আগে রাজনৈতিক মন্ত্রীদের হাতে ছিল, তা চিফ জাস্টিসের কাছে নিয়ে গেছি। প্রায় সোয়া দুই শ’ বিচারকের পদ এক দিনে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এমন একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি, যার জন্য বাংলাদেশে সমালোচনা হয়নি। দেওয়ানি কার্যবিধি আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে, যেটা আগে হয়নি।

তিনি বলেন, তার মন্ত্রণালয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে খুঁজে সবচেয়ে সৎ ও যোগ্য অফিসারদের নিয়ে এসেছেন, যারা দিনরাত কাজ করছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা যে পরিবর্তন ও সংস্কার এনেছি, তা রাজনৈতিক সরকার ধরে রাখলে ন্যায়বিচার বৃদ্ধি পাবে। দরিদ্র, অসহায় মানুষ বিনা খরচে দ্রুততম সময়ে আইনগত সহায়তা পাবে।

গত ১ জুলাই আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়িভাড়া, যৌতুক ইত্যাদি তফসিলভুক্ত বিষয়ে সিলেটসহ ১২টি জেলায় মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হচ্ছে।

আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রচলিত আদালতের চেয়ে ১০ ভাগের ১ ভাগ সময় লাগে। প্রচলিত আদালতে যদি পাঁচ বছর লাগে, লিগ্যাল এইডে সেটি নিষ্পত্তি করতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এখানে ৯০ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে, ফলে তারা আর আদালতে যায় না।

লিগ্যাল এইড আগে বাধ্যতামূলক না হলেও এখন মামলার জট কমাতে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ‘আপনাকে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। সেখানে অসন্তুষ্ট থাকলে তবে আদালতে যেতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এটা ঠিকমতো করতে পারলে মামলার জট কমে যাবে এবং মানুষের হয়রানি কমবে,’ বলেন আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শেখ আশফাকুর রহমান, সিলেট জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার দুই প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানের শুরুতে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ে একটি নাটক প্রদর্শন করা হয়।

এর আগে সকালে সিলেট পৌঁছে আইন উপদেষ্টা দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র রাতারগুল পরিদর্শন করেন।