Dhaka রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত ‘বঙ্গভ্যাক্স’ পেল মার্কিন পেটেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশের গবেষণা ও ওষুধ শিল্পে এক ঐতিহাসিক অর্জন করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি তাদের উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড ভিত্তিক টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব অধিদপ্তর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব (পেটেন্টে) লাভ করেছে। এটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরের ইতিহাসে ওষুধশিল্পে প্রথম মেধাস্বত্ব অর্জনের ঘটনা।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সাল থেকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা এবং জটিল রোগের আধুনিক ওষুধ নিয়ে কাজ করছে। করোনা মহামারির সময় প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী ড. কাকন নাগ ও ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়। ওই গবেষণায় আবিষ্কৃত ‘কোভিড-১৯ এমআরএনএ’ টিকা বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) কর্তৃক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন লাভ করে।

২০২০ সালে টিকাটির জেনেটিক সংকেত (কোডিং সিকুয়েন্স) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জৈবতথ্য ভান্ডার (NCBI)-তে প্রকাশিত হয়। পরে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার-এর বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলসেভিয়ারের ‘টিকা’ (Vaccine) সাময়িকীতে বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২০ সালেই এটিকে তাদের কোভিড টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্বের একমাত্র এক-ডোজের এমআরএনএ টিকা

গ্লোব বায়োটেকের দাবি, বঙ্গভ্যাক্স হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র এক ডোজে কার্যকর রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড (mRNA) ভিত্তিক টিকা, যা বিভিন্ন করোনা রূপের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধেও কার্যকর। এতে নিজস্ব উদ্ভাবিত অণুপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনোলজি) ব্যবহার করা হয়েছে, যা শুধু এমআরএনএ নয়, ডিএনএ, উপাদানভিত্তিক (সাবইউনিট), নিষ্ক্রিয় ভাইরাস কিংবা পুনঃসংশ্লেষিত ভাইরাসভিত্তিক টিকাও তৈরি করতে সক্ষম।

পেটেন্টের গুরুত্ব

এটি বাংলাদেশের চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যে টিকার ভূমিকা অপরিহার্য। পেটেন্টের এই মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে কার্যকরী ও নিরাপদ টিকা নিজ দেশেই কম খরচে উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে সম্মান ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কারের এই প্যাটেন্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

বানরের ওপর সফল পরীক্ষা, বিএমআরসি অনুমোদনপ্রাপ্ত

টিকাটি প্রাণীতে (বানরের ওপর) সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রাণীতে (বানর) টিকার পরীক্ষা। এটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) থেকে মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর অনুমোদনও পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত এই মেধাস্বত্বে মোট ৩০টি উদ্ভাবনী দাবি (ইনভেনশন ক্লেইম) অনুমোদন পেয়েছে। গ্লোব বায়োটেক জানিয়েছে, এটি প্রযুক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ নতুন ও মৌলিক (নভেল) উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক মানে তা স্বীকৃত হয়েছে।

এই অর্জনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গ্লোব বায়োটেক বলছে, বাংলাদেশের টিকা নির্ভরতা কমিয়ে এনে দেশের টিকা নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও তৈরি হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ বলেন, এটি শুধু একটি টিকার মেধাস্বত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন অপেক্ষা, টিকাটি চূড়ান্ত পরীক্ষার পর সাধারণ মানুষের ব্যবহারে কবে আসবে।

এই প্রযুক্তি শুধু করোনা নয়, ভবিষ্যতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তের অসুখসহ জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরির পথও খুলে দেবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত ‘বঙ্গভ্যাক্স’ পেল মার্কিন পেটেন্ট

প্রকাশের সময় : ০২:১০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশের গবেষণা ও ওষুধ শিল্পে এক ঐতিহাসিক অর্জন করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি তাদের উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড ভিত্তিক টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব অধিদপ্তর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব (পেটেন্টে) লাভ করেছে। এটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরের ইতিহাসে ওষুধশিল্পে প্রথম মেধাস্বত্ব অর্জনের ঘটনা।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সাল থেকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা এবং জটিল রোগের আধুনিক ওষুধ নিয়ে কাজ করছে। করোনা মহামারির সময় প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী ড. কাকন নাগ ও ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়। ওই গবেষণায় আবিষ্কৃত ‘কোভিড-১৯ এমআরএনএ’ টিকা বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) কর্তৃক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন লাভ করে।

২০২০ সালে টিকাটির জেনেটিক সংকেত (কোডিং সিকুয়েন্স) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জৈবতথ্য ভান্ডার (NCBI)-তে প্রকাশিত হয়। পরে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার-এর বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলসেভিয়ারের ‘টিকা’ (Vaccine) সাময়িকীতে বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২০ সালেই এটিকে তাদের কোভিড টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্বের একমাত্র এক-ডোজের এমআরএনএ টিকা

গ্লোব বায়োটেকের দাবি, বঙ্গভ্যাক্স হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র এক ডোজে কার্যকর রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড (mRNA) ভিত্তিক টিকা, যা বিভিন্ন করোনা রূপের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধেও কার্যকর। এতে নিজস্ব উদ্ভাবিত অণুপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনোলজি) ব্যবহার করা হয়েছে, যা শুধু এমআরএনএ নয়, ডিএনএ, উপাদানভিত্তিক (সাবইউনিট), নিষ্ক্রিয় ভাইরাস কিংবা পুনঃসংশ্লেষিত ভাইরাসভিত্তিক টিকাও তৈরি করতে সক্ষম।

পেটেন্টের গুরুত্ব

এটি বাংলাদেশের চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যে টিকার ভূমিকা অপরিহার্য। পেটেন্টের এই মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে কার্যকরী ও নিরাপদ টিকা নিজ দেশেই কম খরচে উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে সম্মান ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কারের এই প্যাটেন্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

বানরের ওপর সফল পরীক্ষা, বিএমআরসি অনুমোদনপ্রাপ্ত

টিকাটি প্রাণীতে (বানরের ওপর) সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রাণীতে (বানর) টিকার পরীক্ষা। এটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) থেকে মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর অনুমোদনও পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত এই মেধাস্বত্বে মোট ৩০টি উদ্ভাবনী দাবি (ইনভেনশন ক্লেইম) অনুমোদন পেয়েছে। গ্লোব বায়োটেক জানিয়েছে, এটি প্রযুক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ নতুন ও মৌলিক (নভেল) উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক মানে তা স্বীকৃত হয়েছে।

এই অর্জনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গ্লোব বায়োটেক বলছে, বাংলাদেশের টিকা নির্ভরতা কমিয়ে এনে দেশের টিকা নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও তৈরি হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ বলেন, এটি শুধু একটি টিকার মেধাস্বত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন অপেক্ষা, টিকাটি চূড়ান্ত পরীক্ষার পর সাধারণ মানুষের ব্যবহারে কবে আসবে।

এই প্রযুক্তি শুধু করোনা নয়, ভবিষ্যতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তের অসুখসহ জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরির পথও খুলে দেবে।