নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার কারাবন্দি থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজার মেয়াদ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজার মেয়াদ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে যারা বয়স্ক ও নারী কারাবন্দি রয়েছেন, তাদের সাজার মেয়াদ কমানো হবে। নারীদের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবনের মেয়াদ কমিয়ে ২০ বছর করা হবে। পুরুষের ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ এর চেয়ে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে মেয়াদ কত করা হবে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আবার কতগুলো স্পেসিফিক আছে, তার বয়সটা কত। যে ১৮ বছরে অপকর্ম করেছে, ২০ বছর পর তাকে ছেড়ে দিলে তখন তো তার বয়স ৩৮ বছর হয়। সে হয়তো এসে আবার অপকর্ম করতে পারে। এ বিষয়গুলো দেখা হবে, তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে আমরা একটু বেশি লিবারেল।
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধ প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে। পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ ছিল না। জাতীয় নির্বাচনেও আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে যারা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারও নেই। তারা লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। এটা কোনো অবস্থায় বরদাশত করা হবে না। তারা যদি আজকের মধ্যে এটা সমাধান না করে, তাহলে আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দু-একটি নির্বাচন হয়ে গেল, এসব বিষয়েও একটু আলোচনা হয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ সীমান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে পূজা এবং ফরিদপুরের দুটি ইউনিয়ন নিয়ে যে সমস্যা, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ফরিদপুরের এই দুই ইউনিয়নের কারণে বিভিন্ন জেলার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফরিদপুরে দুটি ইউনিয়ন আগে যে সংসদীয় আসনে ছিল, সেখান থেকে অন্য আসনে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটা নির্বাচন কমিশন করেছে। যুক্তি-তর্কের সবকিছু শোনার পর তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়েই এলাকার লোকজনের মধ্যে একটা ক্ষোভ।
তিনি বলেন, এটা নিয়ে আসলেই যদি তাদের ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা যথাযথ চ্যানেলে জানানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই দুটি ইউনিয়নে কতজন লোক আর কতজন ভোটার? অথচ তারা লাখ লাখ লোককে জিম্মি করে রাখছে। এটা কোনো অবস্থায় বরদাশত করা হবে না। তারা যদি আজকের মধ্যে এটা সমাধান না করে, তাহলে আমরা আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।
আসন্ন দুর্গাপূজায় যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য আমাদের যা করা প্রয়োজন তা করা হবে বলে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আপনারা জানেন পূজা একেবারেই নিকটে চলে এসেছে। পূজার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে। এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কে কোন ধর্মের আমরা সে বিচারে যাব না। এর পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তারা (সনাতন ধর্মাবলম্বীরা) যেন ভালোভাবে পূজাটা করতে পারেন। এজন্য আপনাদের সবার সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রয়োজন।
উপদেষ্টা বলেন, পূজায় যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য আমাদের যা করা প্রয়োজন তা করব। সবাই যেন নির্বিঘ্নে এবং ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পূজা করতে পারে আমরাসে ব্যবস্থা করব। এর পবিত্রতা রক্ষায় আমরা সব ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, অনেক জায়গায় পূজা কমিটিতে নিজেদের মধ্যে একটি কোন্দল রয়ে গেছে। আমরা অনুরোধ করব তারা নিজেদের কোন্দল মিটিয়ে কীভাবে ভালো করে পূজা উদযাপন করা যায় সে ব্যবস্থা করবে। আমরা আশা করি এবারের পূজা নির্বিঘ্নে, উৎসবমুখর পরিবেশে ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে উদযাপন করা যাবে।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দু-একটা নির্বাচন হয়ে গেল—এসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণ ও আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি ও সীমান্ত বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে পূজা ও ফরিদপুরের দুইটি ইউনিয়ন সংক্রান্ত সমস্যা প্রধান আলোচ্যসূচি ছিল।