সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর ওপর গুদামের সামনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাস্তবায়নে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন আর্চ সেতুর কাজ ধীরগতিতে চলার ফলে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে উপজেলাবাসীর মধ্যে। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও এখন পর্যন্ত সেতুর প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি সিলেট বিভাগের প্রথম আর্চ সেতু।
রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে সিলেট বিভাগের প্রথম এই আর্চ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১.২৫ মিটার প্রস্থে। সেতুর দুপাশে থাকবে ফুটপাত, আলোকসজ্জা এবং নৌ-চলাচলের সুবিধার্থে থাকবে উঁচু ফাঁকা। মধ্যস্থলে কোনো পিলার না রেখে দুই পাশে অ্যাবাটমেন্টের মাধ্যমে ইস্পাতের কাঠামোয় সেতুটিকে নান্দনিকভাবে দৃশ্যমান করা হচ্ছে। বহুল প্রত্যাশিত এ সেতুর নির্মাণকাজে ধীরগতিতে উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৮ সালে এলাকাবাসী ও এলজিইডির মাধ্যমে নলজুর নদের ডাকবাংলোর সামনে আরেকটি সেতু নির্মাণ করে। ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরকে পৌরসভায় রূপান্তরিত ও শহরের ওপর দিয়ে পাগলা জগন্নাথপুর আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক চালু হওয়ায় শহরে যানজটের ব্যাপকতা ও নাগরিক ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। সরু এ দুটি সেতু দিয়ে চলাচল দুরূহ হয়ে ওঠে। যার পারিপ্রেক্ষিতে গুদামের সামনের সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এমএ মান্নান সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। পরে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এসেও কাজের অর্ধেকই অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এদিকে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অপরিকল্পিত কার্যক্রমের কারণে জগন্নাথপুর শহরের যানজট ও জনদুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক এমএ কাদির বলেন, উপজেলা সদরের দুটি সেতু একসঙ্গে অচল হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলাবাসী। দুই দফা মেয়াদ শেষ হলেও আর্চ সেতুর কাজ শেষ না হওয়া খুব দুঃখজনক। আর ডাকবাংলো সেতু নির্মাণকাজের কোনো খবর মিলছে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মাওলানা মারজান কোরেশী অভিযোগ করে বলেন, আসল সমস্যা হচ্ছে জনগণের দুর্ভোগের ব্যাপারে প্রশাসনের উদাসীনতা। তারা যদি জনবান্ধব হতো, তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে উদ্যোগী হতো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিযুক্ত সুপারভাইজার সাইফুল আলম জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার আট মাস পর কাজ শুরু করতে হয়েছে। বিদ্যুতের তার ও খুঁটি অপসারণ, পুরনো সেতু ভাঙা এবং বর্ষাকালে নদীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার সাইফুল আলম জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার আট মাস পর কাজ শুরু করতে হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি এবং পুরনো সেতু অপসারণ করতে সময় লেগেছে। এ ছাড়া বর্ষাকালে নদীতে পানি আসার কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই সেতুর কাজ শেষ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন বলেন, নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। আপাতত এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।