Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হতেই উঠে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : 

রাজশাহীর দুর্গাপুরে তিওড়কুড়ী থেকে পাচুবাড়ি হয়ে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত নবনির্মিত চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ৩ সেপ্টেম্বর শেষ হতেই বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ফেটে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এজিংয়ের ২ নম্বর ইট বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় রাস্তাটি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪ হাজার ২৮০ মিটার সড়কটির মেইনটেন্যান্স কাজ শুরু হয় গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ জুন। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সড়কটির চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ টাকা। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব ২৫ মিলিমিটার ও প্রস্থ ৩ মিটার হওয়ার কথা। মেইনটেন্যান্স কাজটি করেছে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার”।

৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য নির্মিত সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে। এমনকি পা দিয়ে হালকা ঘষা দিলেও কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার কার্পেটিং করা হয়েছে। নিচের বেডে সরকারি মাটি ও কাদা দেখা যাচ্ছে। এজিংয়ের ২ নম্বর ইটগুলো অর্ধেক ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে আছে, অনেক জায়গায় খুলে পড়েছে। ভ্যান, অটোরিকশা চলাচলেই রাস্তাটি ফেটে যাচ্ছে।

শ্রীধরপুর এলাকার বাসিন্দা আবু বাক্কার বলেন, কার্পেটিং টুকরো হাতে নিয়ে দেখুন, কিছুই নাই, সব শেষ! এত নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে রাস্তা বানিয়েছে যে মুরগি হাঁচড়ালেও উঠে যাচ্ছে। হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে, চাপ দিলে মাটির মতো গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তায় ২ নম্বর, ৩ নম্বর ইট ছাড়া একটাও ১ নম্বর ইট ব্যবহার হয়নি। উপজেলা এলজিডি অফিসকে একাধিক জানলেও তারা কোনো ব্যবস্থা তদারকি করেনি। ঠিকাদার যেমন ইচ্ছে তেমন সড়ক নির্মান করেছে।

অটোরিকশাচালক সামছুল জানান, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন খানাখন্দে ভরা ছিল। কাজ শুরু হলে ভালো লেগেছিল। কিন্তু এত নিম্নমানের কাজ হয়েছে যে মনে হয় না এক মাসও টিকবে। আগে গর্ত থাকলেও ১ নম্বর ইট ছিল। এখন সব ২-৩ নম্বর ইট, আর কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। মনে হয় না আগামী বর্ষায় এই রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাওন বলেন, পা দিয়ে চাপ দিলেই রাস্তা উঠে যাচ্ছে। কিছু করার নাই, আমাদের কপাল খারাপ! এগুলো রাস্তাঘাট? মানুষ চলবে কিভাবে? দুর্ঘটনা ঘটবে নিশ্চিত। শেয়ালের কাছে মুরগি রাখা যেমন, রক্ষকই এখন ভক্ষক। আমাদের আক্ষেপ ছাড়া কিছুই নেই।

সূত্র মতে, দুর্গাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাসুক ই মোহাম্মদ যোগদানের পর থেকেই সীমাহীন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। তার সময়ে নির্মিত প্রায় সব রাস্তাই বছর পার না হতেই বেহাল অবস্থায় পড়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাসুক ই মোহাম্মদ বলেন, রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ল্যাব টেস্ট শেষ হলে যদি কোনো সমস্যা থাকে আমরা ব্যবস্থা নেব। চোখের দেখায় কিছু বলা যায় না, সবকিছু টেস্টের ওপর নির্ভর করছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়নি। এজিংয়ে ১ নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ইটের ল্যাব টেস্টের মানদণ্ড মনে নেই। আমার বিরুদ্ধে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলে একাধিক অভিযোগ থাকত। আমি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।

রাজশাহী জেলার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে রাস্তাটি পুনর্র্নিমাণ করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব ছাড়লেন বিএনপিপন্থি ৩ শিক্ষক

দুর্গাপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হতেই উঠে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং

প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : 

রাজশাহীর দুর্গাপুরে তিওড়কুড়ী থেকে পাচুবাড়ি হয়ে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত নবনির্মিত চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ৩ সেপ্টেম্বর শেষ হতেই বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ফেটে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এজিংয়ের ২ নম্বর ইট বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় রাস্তাটি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪ হাজার ২৮০ মিটার সড়কটির মেইনটেন্যান্স কাজ শুরু হয় গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ জুন। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সড়কটির চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ টাকা। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব ২৫ মিলিমিটার ও প্রস্থ ৩ মিটার হওয়ার কথা। মেইনটেন্যান্স কাজটি করেছে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার”।

৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য নির্মিত সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে। এমনকি পা দিয়ে হালকা ঘষা দিলেও কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার কার্পেটিং করা হয়েছে। নিচের বেডে সরকারি মাটি ও কাদা দেখা যাচ্ছে। এজিংয়ের ২ নম্বর ইটগুলো অর্ধেক ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে আছে, অনেক জায়গায় খুলে পড়েছে। ভ্যান, অটোরিকশা চলাচলেই রাস্তাটি ফেটে যাচ্ছে।

শ্রীধরপুর এলাকার বাসিন্দা আবু বাক্কার বলেন, কার্পেটিং টুকরো হাতে নিয়ে দেখুন, কিছুই নাই, সব শেষ! এত নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে রাস্তা বানিয়েছে যে মুরগি হাঁচড়ালেও উঠে যাচ্ছে। হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে, চাপ দিলে মাটির মতো গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তায় ২ নম্বর, ৩ নম্বর ইট ছাড়া একটাও ১ নম্বর ইট ব্যবহার হয়নি। উপজেলা এলজিডি অফিসকে একাধিক জানলেও তারা কোনো ব্যবস্থা তদারকি করেনি। ঠিকাদার যেমন ইচ্ছে তেমন সড়ক নির্মান করেছে।

অটোরিকশাচালক সামছুল জানান, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন খানাখন্দে ভরা ছিল। কাজ শুরু হলে ভালো লেগেছিল। কিন্তু এত নিম্নমানের কাজ হয়েছে যে মনে হয় না এক মাসও টিকবে। আগে গর্ত থাকলেও ১ নম্বর ইট ছিল। এখন সব ২-৩ নম্বর ইট, আর কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। মনে হয় না আগামী বর্ষায় এই রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাওন বলেন, পা দিয়ে চাপ দিলেই রাস্তা উঠে যাচ্ছে। কিছু করার নাই, আমাদের কপাল খারাপ! এগুলো রাস্তাঘাট? মানুষ চলবে কিভাবে? দুর্ঘটনা ঘটবে নিশ্চিত। শেয়ালের কাছে মুরগি রাখা যেমন, রক্ষকই এখন ভক্ষক। আমাদের আক্ষেপ ছাড়া কিছুই নেই।

সূত্র মতে, দুর্গাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাসুক ই মোহাম্মদ যোগদানের পর থেকেই সীমাহীন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। তার সময়ে নির্মিত প্রায় সব রাস্তাই বছর পার না হতেই বেহাল অবস্থায় পড়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাসুক ই মোহাম্মদ বলেন, রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ল্যাব টেস্ট শেষ হলে যদি কোনো সমস্যা থাকে আমরা ব্যবস্থা নেব। চোখের দেখায় কিছু বলা যায় না, সবকিছু টেস্টের ওপর নির্ভর করছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়নি। এজিংয়ে ১ নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ইটের ল্যাব টেস্টের মানদণ্ড মনে নেই। আমার বিরুদ্ধে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলে একাধিক অভিযোগ থাকত। আমি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।

রাজশাহী জেলার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে রাস্তাটি পুনর্র্নিমাণ করা হবে।