Dhaka বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরে মহাসড়ক অবরোধ, ঢাকার সঙ্গে ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি : 

ফরিদপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় জনতা। এতে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে এই অবরোধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে আটটা থেকে ভাঙ্গার পুকুরিয়া ও সোয়াদিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মহাসড়কের ওপর গাছ, বাঁশ ও ইট ফেলে অবরোধ করেন কয়েক হাজার স্থানীয় জনতা। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে। দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।

অবরোধকারীরা জানান, ভাঙ্গাকে বিভক্ত করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই মানা হবে না। তারা বলেন, আমরা ভাঙ্গার মানুষ, ভাঙ্গাতেই থাকতে চাই। নগরকান্দার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেব না।

এলাকাবাসী জানান, আগে ফরিদপুর-৪ আসনটি ছিল ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত। ফরিদপুর-২ আসন ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে। কিন্তু গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে দেশের ৪৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে। ওই গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর জেলার দুটি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করা হয়। এর ফলে, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট, পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে ও হামিরদী বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে রেখেছে স্থানীয়রা। এতে সব কয়েকটি মহাসড়কের সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সীমানা পুনর্বিন্যাসের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গায় দুই দফা ব্যাপক সড়ক অবরোধ করেছিলেন এলাকাবাসী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আশ্বাসে সে সময় তারা অবরোধ তুলে নেন। এতে কাজ না হওয়ায় ওই দুই ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালসহ সাতজনের পক্ষ থেকে ই-মেইলে ওই নোটিশ পাঠানো হয়। ওই লিগ্যাল নোটিশে নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইসির ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার কথা জানান শহিদুল ইসলাম।

তবে ওই দিনই (৭ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘প্রশ্ন তোলার’ কোনো সুযোগ নেই বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সীমানা পুনরবিন্যাস-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদলানোর ব্যাপারে তিনি সেদিন দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো ‘লাভ হবে না’।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুরে মহাসড়ক অবরোধ, ঢাকার সঙ্গে ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশের সময় : ১১:৫২:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি : 

ফরিদপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় জনতা। এতে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে এই অবরোধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে আটটা থেকে ভাঙ্গার পুকুরিয়া ও সোয়াদিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মহাসড়কের ওপর গাছ, বাঁশ ও ইট ফেলে অবরোধ করেন কয়েক হাজার স্থানীয় জনতা। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে। দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।

অবরোধকারীরা জানান, ভাঙ্গাকে বিভক্ত করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই মানা হবে না। তারা বলেন, আমরা ভাঙ্গার মানুষ, ভাঙ্গাতেই থাকতে চাই। নগরকান্দার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেব না।

এলাকাবাসী জানান, আগে ফরিদপুর-৪ আসনটি ছিল ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত। ফরিদপুর-২ আসন ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে। কিন্তু গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে দেশের ৪৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে। ওই গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর জেলার দুটি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করা হয়। এর ফলে, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট, পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে ও হামিরদী বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে রেখেছে স্থানীয়রা। এতে সব কয়েকটি মহাসড়কের সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সীমানা পুনর্বিন্যাসের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গায় দুই দফা ব্যাপক সড়ক অবরোধ করেছিলেন এলাকাবাসী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আশ্বাসে সে সময় তারা অবরোধ তুলে নেন। এতে কাজ না হওয়ায় ওই দুই ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালসহ সাতজনের পক্ষ থেকে ই-মেইলে ওই নোটিশ পাঠানো হয়। ওই লিগ্যাল নোটিশে নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইসির ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার কথা জানান শহিদুল ইসলাম।

তবে ওই দিনই (৭ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘প্রশ্ন তোলার’ কোনো সুযোগ নেই বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সীমানা পুনরবিন্যাস-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদলানোর ব্যাপারে তিনি সেদিন দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো ‘লাভ হবে না’।