পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি :
উদ্বোধনের ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি পিরোজপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে টার্মিনালটি বর্তমানে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। খানাখন্দ, কাদা-পানি আর অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে টার্মিনালের পুরো এলাকা। সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে তলিয়ে যায় পুরো টার্মিনাল, ডুবে যায় বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গর্তগুলো যেন রূপ নেয় ছোট ছোট হ্রদে। আর সেই হ্রদ পাড়ি দিতে হয় প্রতিদিন হাজারও যাত্রীকে। কেউ অফিসগামী, কেউ স্কুলের শিক্ষার্থী, আবার কেউ জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলা সাধারণ মানুষ।
প্রতিদিনই বাস, রিকশা, অটোরিকশা থেকে শুরু করে মোটরসাইকেল পর্যন্ত আটকে যাচ্ছে এই গর্তে। যাত্রীদের নামতে হচ্ছে কাদা-পানিতে। অনেক সময় পড়ে আহতও হচ্ছেন। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারও যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও চালকরা।
২০০৬ সালে শহরের বাইপাস সড়কের পাশে মাছিমপুর এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এ টার্মিনাল নির্মাণ করে। তখন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে পড়ে অপ্রতুল। প্রতিদিন প্রায় ১৪টি রুটে ৬ শতাধিকের বেশি বাস ও মিনিবাস এখান থেকে ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী বহন করছে। কিন্তু ধারণক্ষমতার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি বাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে টার্মিনালে।
টার্মিনালে বাস রাখার জায়গা না থাকায় সড়কের দুই পাশে সারি সারি বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে যানজট ও চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটছে। পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে নতুন নতুন বাস চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে অযাচিত চাপ পড়ছে টার্মিনালের ওপর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টার্মিনালে ঢোকার মুখেই রয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়ায় কোথায় গর্ত তা বোঝা যায় না। এতে প্রায়ই বাস আটকে যায়। ছোট যানবাহন যেমন রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল পড়ছে বিপদে। যাত্রীদেরও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। কেউ নামতে গিয়ে কাদা-পানিতে ভিজে যাচ্ছেন, আবার কেউ খানাখন্দে পড়ে আহত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া শুধু খানাখন্দ মেরামত করে সমস্যার সমাধান হবে না। টার্মিনালটিকে আধুনিকায়ন, বাস পার্কিংয়ের জন্য আলাদা জোন তৈরি, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অতিরিক্ত বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা দরকার। না হলে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়বে।
বাস চালক, মালিক ও বাসে কর্মরত শ্রমিকেরা জানান, ১৯ বছর আগে নির্মিত হলেও এ টার্মিনালে এখনও কোনো বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। ফলে এখন এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাদের একটাই দাবি দ্রুত সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হোক পিরোজপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত হয়।
বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা বলেন, খানাখন্দ আর গর্তে ভরা টার্মিনাল। বৃষ্টির পানি আটকে আছে সবখানে। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে কতৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিবে আমরা আশা করি।
পিরোজপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি সভাপতি অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, পিরোজপুর বাস টার্মিনালে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন লোক বিভিন্নভাবে লুট করেছে। টার্মিনালের ভেতরে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। যার ফলে সাধারণ যাত্রীসহ যানবাহনের চলাচল করতে অসুবিধা হয়। আমরা পিরোজপুর পৌরসভায় আহ্বান জানিয়েছি গর্তগুলো ভরাট করার জন্য। তারা নাম মাত্র কাজ করেছে। যার ফলে এখনও গর্তগুলো রয়ে গেছে। বাস টার্মিনালের ভেতরে নিচু জায়গাগুলো উঁচু করা হোক যাতে যাত্রীরা হয়রানি থেকে বাচঁতে পারে।
পিরোজপুর পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিক জানান, গত অর্থ বছরে আইইউজিআইপি প্রজেক্ট ছিল। সেখানে আমরা স্কিম প্রেরণ করেছিলাম। এলজিইডির এলিভেন টাউন প্রকল্পেও আমরা প্রস্তাব প্রেরণ করেছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ আসেনি। তবে গত বছর টার্মিনালে স্বল্প পরিসরে মেরামত করেছিলাম। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে তা শেষ হয়ে গেছে। নতুন প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে আমরা নতুন করে সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব।