বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :
সেতু আছে, কিন্তু সেটি দিয়ে চলাচল করা যায় না। উজান থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতে পাঁচ বছর আগে ভেঙে যাওয়া এই সেতুর ওপর গ্রামবাসী নিজেরাই গাছের সাঁকো তৈরি করেছেন। সেই সাঁকোই এখন তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। প্রতিনিয়ত সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকেই আহত হচ্ছেন। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ঝিরির ওপর আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মাথায় উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে সেতুটির পূর্ব অংশ ধসে পড়ে। সংযোগ সড়কও ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সেতু ভেঙে যাওয়ার পর পাড়াবাসীরা গাছের (বুল্লি) সাঁকো তৈরি করে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। ছোট-বড় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এ সেতু দিয়ে সোনাই মারমা পাড়া, সোনাই সেপ্রু পাড়া, ছাপুসে পাড়া, সোনাই আগা পাড়া, নগুখং পাড়ার প্রায় ২৫০ পরিবারের হাজারো মানুষ চলাচল করতেন।
জামছড়ি জুনিয়র হাইস্কুল ও বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী উত্তম কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ছোটরা একা সাঁকো পার হতে পারে না, অন্যের সহায়তা নিতে হয়। বৃষ্টি বেশি হলে ঝিরির পানিও বেশি থাকে। পানি কমতে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে আহত হতে হয়।
স্থানীয় অভিভাবক করুণারানী দাশ বলেন, বর্ষার সময় প্রবল স্রোতে সাঁকোও ডুবে যায়। তখন ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। টানা বৃষ্টির সময় দুর্ঘটনার ভয়ে অনেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠান না। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছে।
মাহিন্দ্রা চালক সুজন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সেতুটি ভেঙে গেছে প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে। বর্তমানে সবাই সাঁকো পায়ে হেঁটে পারাপার হন। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফলমূল ও শাকসবজি মাথায় বহন করে যাতায়াত করছেন। ফলে তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে অনেক।
নোয়াপতং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চনুমং মার্মা বলেন, বছরের পর বছর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, মাদরাসায় যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ৫-৬ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বান্দরবান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাঘমারা-বিলাইছড়ি সড়কে ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে এলজিইডির আওতায় আসার পর জানতে পারি, সেতুটি ধসে গেছে। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।