নিজস্ব প্রতিবেদক :
গড়ে উঠা মালিকানার ধরন অব্যাহত রেখে স্বাধীন প্রোফেশনাল সাংবাদিকতা সম্ভব নয় বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় ডেইলি স্টার ভবনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতিবেদন নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৬ বছর সাংবাদিকতা ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ জেগে উঠলো। এর দায় নেয়া উচিত। মালিকানার যে ধরন তৈরি হয়েছে, সেটা অব্যাহত রেখে স্বাধীন প্রোফেশনাল সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। আপনি দোকানদার হবেন নাকি চতুর্থ স্তম্ভ হবেন সেটা ঠিক করতে হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত। মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধ করতে হলে। সংস্কারের দায়িত্ব শুধু সরকার বা কমিশনের নয়, সাংবাদিকদের সংস্কারের জন্য চাপ দিতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, সাংবাদিকদের দুরবস্থার জন্য সাংবাদিক নেতৃত্ব কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিতে তাদের অঙ্গীকার করতে হবে। নিরাপত্তা, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে মালিকপক্ষ ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার আশায় সম্পাদকরা দালালি করলে কোনোদিন অধিকার আদায় সম্ভব না।
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনীতিবিদরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অঙ্গীকার দিলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার। এটা দলগুলোর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কাগজে সই করার চেয়ে বড় সংস্কার হবে। অন্তর্বর্তী সরকার না থাকলেও সাংবাদিকরা থেকে যাবেন। তাই সাংবাদিকদেরই নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন জারি রাখার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টকে অন্তর্ভুক্ত করেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু গণমাধ্যম কমিশন নয় আরও ৪টি রিপোর্ট ঐকমত্য কমিশনের অধীনে রাখা হয়নি। তার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো সময়। ১২ ফেব্রুয়ারি একটা প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে ঐকমত্য কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু তখন পর্যন্ত ৬টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল তাই সরকারের পক্ষ থেকে এটি বিবেচনা করা হয় যে ৬টি কমিশনের যে প্রতিবেদন তার ভিত্তিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। আর গণমাধ্যম কমিশনের রিপোর্ট যখন দেয়া হয় তখন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এরিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এই সময়ে এটি যোগ করলে কাজের ব্যত্যয় ঘটতো।
আলী রিয়াজ বলেন, গণমাধ্যম সংস্কারের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও চতুর্থ স্তম্ভ হওয়ার দিকটি বিবেচনা করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাগত দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে। সাংবাদিক ইউনিয়নকে কর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। সরকারের অপেক্ষায় থাকা যাবে না। পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে বিভিন্ন দাবি তোলা উচিত ছিল, সাংবাদিকরা তা করছে না। কারণ পেশাদারিত্বের জায়গায় যে অবস্থান নেয়ার কথা সেটি সাংবাদিকরা নেয়নি। দাবি তোলার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার দিকে চেয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, মালিকরা জানে সাংবাদিকদের বঞ্চিত করলেও কেউ প্রতিবাদ করবে না। মালিকানার যে ধরন তা অব্যহত রেখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা দুরুহ ব্যাপার। মিডিয়া ব্যবহার হচ্ছে অন্য স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। দোকানদার হলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হওয়া সম্ভব নয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক 























