বরগুনা জেলা প্রতিনিধি :
বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া ও গুলিশাখালী গ্রামের খালের উপরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সেতু। কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুতে উঠতে হয় বাঁশের মই দিয়ে। এখন বাঁশের মই এই সেতুর ভরসা। যার ফলে তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার।
এলজিইডি সুত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩ সালে এলজিইডি আমড়াগাছিয়া বাজারের পশ্চিমপাশে ৬৬ মিটার দৈঘ্য ও ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের গার্ডার সেতু নির্মাণের চুক্তি হয়। তাতে ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেডি।
২০২৩ সালের ১৯ মে কার্যাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জুন মাসের আগেই মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নিয়ে দেখা দেয় নানা জটিলতা। সেতুর পশ্চিম পাশে মাত্র ৫ ফুট দূরত্বে রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানী গ্রামের একটি সড়ক। সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে ওই সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে প্রায় ১১ মাস ধরে সেতুটি অব্যবহৃত অবস্থায় পরে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয়রা কাঠ-বাঁশ দিয়ে মই তৈরি করে কোন রকম চলাচল করছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় পণ্য পরিবহনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত ১০ কিলোমিটার ঘুরে মহিষকাটা সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে। যার ফলে সময় ও ভাড়া দুটোই বেড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটিতে দীর্ঘদিন সংযোগ সড়ক না থাকায় পণ্য পরিবহন, রোগী আনা-নেয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটি আমতলীর গুলিশাখালী, চাওড়া ও কুকুয়া গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক। তারা দ্রুত এই সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানান।
স্থানীয় সজিব মিয়া জানান, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এই সেতু দিয়ে তিনটি ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করে। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ এখান থেকে চলাচল করে। সরকার অনেক টাকা খরচ করে সেতুটি নির্মাণ করেছে। কিন্তু কোন কাজে আসছে না।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পৌর বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান জানান, এই সেতুটি দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। কুকুয়া, চাওড়া ও গুলিশাখালী এই তিন ইউনিয়ন আমতলীর গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছে। এই সেতুটিই তাদের একমাত্র ভরসা। তাই দ্রুত সংযোগ সড়ক করে মানুষের চলাচলের সুবিধার্থের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমতলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ইদ্রিস মিয়া জানান, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে পাশের একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বিকল্প হিসেবে সেখানে আন্ডার পাশ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে ব্যয় কিছুটা বাড়বে। নতুন করে নকশা ও বাজেট তৈরি করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
এবিষয়ে বরগুনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, সেতুর মুল কাজটি হয়ে গেছে। এখন শুধু এপ্রোচের কাজ বাকি। এপ্রোচের কাজের ডিজাইনটি পরিবর্তন হওয়ায় মূল চুক্তিনামা দিয়ে আবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশা করি এটার শিগ্রই আমরা অনুমোদন পাবো। টেন্ডার করে আমরা কাজটি করে দিবো। এটা একেবারে শেষপর্যায়ে আছে। জানি মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। তবে অচিরেই এই ভোগান্তি নিরসন হবে।