নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের ভেতর একটি মহল চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক পক্ষের শক্তি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তবে এসব ঝামেলা সহজেই সমাধান হতো, যদি তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হতো।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। কোথাও কোনো বাধা সৃষ্টি করিনি। এমনকি বড় কোনো দাবি তুলেও সরকারকে বিপদে ফেলিনি। কিন্তু এখন কিছু রাজনৈতিক মহল পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলছে। যেসব দাবি সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই অপরিচিত।
সংস্কার ও প্রতিনিধিত্ব ইস্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক ভোট প্রতিনিধিত্ব (পিআর), এটা বোঝানোই কঠিন। মানুষ কাকে ভোট দিলো, সেটি প্রতিফলিত হলো না সংসদে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতো না। তিনি বলেন, আমি পাঁচ তারিখের পরই বলেছিলাম, তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। তখন নতুন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারতো। কিন্তু সময়ক্ষেপণের ফলে গণতান্ত্রিক শক্তির বদলে অন্যরা সুবিধা নিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, যেদিকে তাকাই দুর্নীতি ছাড়া কিছু দেখি না। অফিস-আদালতে যাওয়া যায় না, ব্যাংকে গিয়ে নিজের টাকাও তোলা যায় না। আজ সকালে আমার স্ত্রী ব্যাংকে ফোন করেছিলেন কিছু টাকা তোলার জন্য, বলা হয়েছে ৫ হাজার টাকার বেশি দেওয়া যাবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের অর্থনীতি লুটপাটকারীদের হাতে জিম্মি। এমনকি দিল্লিতে গিয়ে হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা হয়েছে কীভাবে বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করা যায়।
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনোদিন রাজনীতিতে হতাশ হইনি। সবসময় সবাইকে সাহস দিয়েছি। ইদানিং মাঝে মাঝে হতাশার ছায়া লক্ষ্য করি। বলবেন কেন?- যেদিকে তাকাই দেখি, দেশের বেশিরভাগ মানুষই নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি,- কোনো অফিস আদালতে যেতে পারবেন না। আগেই বলেছি, আগে ঘুষ দেয়া লাগতো এক লাখ, এখন পাঁচ লাখ দিতে হয়।
ফখরুল বলেন, বিএনপির লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তিনি মনে করিয়ে দেন, সংস্কারের ৩১ দফার মধ্যে সব বিষয়ই এরইমধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা সংস্কারের পক্ষে ছিলাম শুরু থেকেই। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, এটা উপলব্ধি করেই আমরা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
আলোচনা সভায় ফখরুল আবারও সতর্ক করেন, যদি আমরা মনে করি জিতে গেছি, তবে বিরাট ভুল হবে। যারা ফায়দা নিতে চায়, তারা বিভিন্নভাবে কাজ করছে। তাই আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে।
আলোচনার শুরুতে মির্জা ফখরুল কাজী জাফর আহমদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ষাট ও সত্তরের দশকে তিনি ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য ছাত্রনেতা। তার বক্তৃতা শুনে মানুষ বিমোহিত হতো।
কাজী জাফরের রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি যখন স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, আমরা কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু অন্তরের অন্তরে তিনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক বিপ্লবী, দেশপ্রেমিক এবং গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ।
মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের চেষ্টা করছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু রাজনৈতিক মহল পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল করতে নিত্যনতুন দাবি তুলছে।
তিনি বলেন, তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির মতো এমন সব বিষয় আনছে, যা এদেশের সাধারণ মানুষ চেনেও না, বোঝেও না। কাকে ভোট দিলো, কে নির্বাচিত হলো, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সংকটকালে উঠে দাঁড়াতে জানে। ফিনিক্স পাখির মতো বাংলাদেশ বারবার জেগে ওঠে।
তিনি মওলানা ভাসানী, জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আসুন, যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি এবং দেশকে রক্ষা করি।
ভাষানী জন শক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ সেলিম ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বক্তব্য দেন।