নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৫ আগস্টের অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। ছোটখাটো ঝগড়া-বিবাদ করে যেন ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার পথ সুগম না হয়। শেখ হাসিনা গত ১৬ বছর দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আমরা আর ফ্যাসিবাদ চাই না।
রোববার (২৪ আগস্ট) বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে রিকশা ও ভ্যানচালকদের মাঝে রেইনকোট বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সরকারের আন্তরিকতার অভাব আছে তা নয়। দ্রব্য মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। দিন দিন কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, কর্মসংস্থানের অভাবে দেশে দুর্ভিক্ষের আলামত দেখা দিচ্ছে। অনেক মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যদি সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়, সেটা করবে জনগণের নির্বাচিত সরকার। আগে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিন, জনগণের সরকার আসুক।
রিজভী সতর্ক করে বলেন, প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদীরা সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি।
কর্মসংস্থান না থাকলে দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের উপদেষ্টারা দুয়েক জায়গায় হাঁস খেতে পারবেন যেকোনো জায়গায়। কিন্তু জনগণ তো পারবে না। মানুষের খুদার সঙ্গে রাজনীতি করা যাবে না। কর্মসংস্থান যেন ঠিক থাকে সেই প্রচেষ্টা সরকারকেই করতে হবে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার চাওয়া নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা কতখানি দ্বিচারী হতে পারেন, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালাও-পড়াও ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসে নিজেই সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। এই হচ্ছে শেখ হাসিনা, যার কোনো ওয়াদা, অঙ্গীকার নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের অনেক দাবি-দাওয়া। আমাদের প্রত্যাশা শান্তি, স্বস্তি থাকবো। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত, সেখানে ন্যায় বিচার পাবে। সরকারের আন্তরিকতা কম সেটা বলবো না। আজকে আর্থিক ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি অনেক কমে আসছে। জিনিসপত্রের দাম এখনো কমছে না, কর্মসংস্থান হচ্ছে না। একের পর এক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান না থাকলে দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হয়।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, জুলাই সদনের জন্য সুপারিশ আসবে, কিন্তু সেটার জন্য আইন ও সংবিধান সংশোধন করতে হয় তা নির্বাচিত সংসদ করবে। একটি রাজনৈতিক দল বলছেন, আগেই গণভোট দিতে হবে, কেন? যদি মূল নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন করতে হয়, মূল নীতিমালা অখণ্ড বিষয়, সেটা সংশোধন করা যায়, তবে সেটা করবে সংসদ। কিন্তু শেখ হাসিনার মতো যদি হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার মতের মিল হয়নি, তাই তাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক পাঠিয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। ওই ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং আলামত এখন কেন থাকবে? যেই নিয়ম শেখ হাসিনা ভেঙেছে, সেটা তো আবার চালু করতে পারি না।
রিজভী বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন, তারা দেশের এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করতে হলে করবে। সেটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু আগে সেটা মানতে হবে, করতে হবে? যেসব সংস্কারে সব ঐকমত্য হয়েছে তার একটা সুপারিশ থাকবে, সেটা নির্বাচিত সংসদ সংশোধন করবে, আইনি ভিত্তি দেবে। সেটা না করে আগেই তালগাছ আমার বলে চিৎকার করতে থাকি..।
ফ্যাসিবাদী শক্তি প্রশাসনে এখনও ঘাপটি মেরে বসে আছে, তারা সুযোগ পেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করবে। আজকে সবাই বলছে, ফ্যাসিবাদী শক্তি সচিবালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় বসে আছে, তারা বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ, মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদ।
বক্তব্য পর্ব শেষে নেতারা রিকশা ও ভ্যানচালকদের হাতে রেইনকোট তুলে দেন। সাধারণ চালকরা বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ তাদের জীবনে বাস্তব উপকার বয়ে আনে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 

























