চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা ভারি বৃষ্টিতে ভেঙে যাওয়ায় ১৪২ কিলোমিটার সড়ক চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নিজস্ব উদ্যোগে ভাঙা সড়ক মেরামত শুরু করলেও ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক ও স্ল্যাব মেরামত এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।
এবার মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। শুরুর দিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হলেও পরে গত দুই মাসে কমপক্ষে ছয়বার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। সবশেষ ৩১ জুলাই নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
বর্ষা শুরুর পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কের আস্তরণ উঠে যায়। বেরিয়ে পড়ে ইট-সুরকি। বৃষ্টি থামার পর ১১ অগাস্ট থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক মেরামত শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে ব্যারিস্টার কলেজ হয়ে ইপিজেড মোড়, সেখান থেকে কাঠগড়, আগ্রাবাদ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত স্ট্র্যান্ড রোড, জাকির হোসেন রোড, বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক, আরাকান রোড ও অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক।
এছাড়া কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর গোল চত্ত্বর, পোর্ট কানেকটিং রোডের নিমতলা থেকে বড়পোল অংশ, বালুছড়া, চৌমুহনী থেকে ব্যাপারি পাড়া, পলিটেকনিক থেকে ঝাউতলা রেলক্রসিং, বারিক বিল্ডিং থেকে কদমতলি, সাগরিকা মোড় থেকে স্টেডিয়ামমুখী বিটাক রোড, আকমল আলী সড়ক, প্রাণহরি দাশ সড়ক, আমবাগান সড়ক এবং সদরঘাট রোডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কাটগর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চলেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের যন্ত্রণা। তখনই সড়কের বেশিরভাগ অংশ বেহাল ছিল। এবার বর্ষায় আরো খারাপ হয়েছে। রাস্তায় বড় বড় গর্ত। এখানে প্রতিদিন শত শত লরি আর ট্রাক চলে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকতে হয়। এখন মুরাদপুর থেকে যেদিকেই যাই না কেন সবগুলো রাস্তা খারাপ। প্রতিবার যেহেতু পানি ওঠে, তাই রাস্তা টেকসই করে করা দরকার। না হলে আমাদের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে না।
নগরীর বেহাল সড়কের যে তালিকা সিটি করপোরেশন করেছে, তাতে দেখা যায়, নগরজুড়ে ৩৮৮টি সড়কের প্রায় ১৪২ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অরক্ষিত নালা ও খাল চিহ্নিত করা হয়েছে ২১ কিলোমিটার। এসব নালার ওপরের প্রায় ১৮ হাজার ৬৬৩ বর্গমিটার স্ল্যাব সংস্কার করা দরকার।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করেছি। নিজস্ব উদ্যোগে মেরামতের কাজও শুরু করেছি। কিন্তু সব সড়ক সংস্কার করার টাকা আমাদের হাতে নেই। এজন্য সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন।
মেয়র শাহাদাত হোসেন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানে তিনি লিখেছেন, সাম্প্রতিক বর্ষাকালে চট্টগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট সমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় প্রতিদিন নগরীর সড়ক সমূহে চট্টগ্রাম বন্দরের লরি, ট্রাক এবং বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার গাড়ি চলাচল করে। অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এসব কারণে নগরীতে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি, জরুরি পণ্য সরবরাহ এবং চিকিৎসা সেবাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে চিঠিতে লিখেছেন মেয়র।
শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরীর বিভিন্ন খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অপ্রতুলতা থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রবল আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে, সে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া জরুরি।
এসব কাজের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন এবং সিটি করপোরেশনের বর্তমান আর্থিক অবস্থায় এসব কাজ সম্ভব নয় জানিয়ে মেয়র শাহাদাত ওই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন চিঠিতে। চট্টগ্রাম নগরীতে অরক্ষিত খাল নালায় পড়ে গত নয় বছরে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে চলতি বছর।
ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ৭ অগাস্ট বায়েজিদ বোস্তামি সড়কে শীতল ঝর্ণা খালের উপর থাকা সেতুর একাংশ ধসে পড়ে। পরদিন সেই খালের উপর আরেকটি কালভার্টের দুই পাশ দেবে সড়কে ফাটল সৃষ্টির খবর পাওয়া যায়। সিটি করপোরেশনের তালিকা অনুসারে সড়ক সংস্কারে খরচ হবে ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত স্ল্যাব মেরামতে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং অরক্ষিত নালা ও খালে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে ২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচ হবে।