নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিগত সময়ে মুক্তচিন্তার সুযোগ ছিলো না বলেই শিক্ষার বিকাশ ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও শিক্ষা ক্যাডারের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ছাত্রজনতা যে চেতনা ধারণ করে দেশ ফ্যাসিস্ট মুক্ত করেছে, সে চেতনাকে বাচিয়ে রেখে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে হবে। মুক্তচিন্তার সুযোগ না থাকায় বিগত সময়ে শিক্ষার বিকাশ ঘটেনি।
ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, সময় এসেছে তরুণদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার, দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে তৈরি করার।একটা অস্থির সময় পার করছে সবাই, যা বিচক্ষণতার মধ্যে দিয়ে পার করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের মাপ কাঠিতে নিজেদের বিবেচনা করার জন্য কাজ করছে সরকার।
’৭৩-এর অধ্যাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে বহুক্ষেত্রে কলুষিত করেছে বলে মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অটোনমির (স্বায়ত্তশাসন) নামে শিক্ষকেরা কীভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছেন এবং জাতীয় রাজনীতির পঙ্কিল যে ধারা, সেটি কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কলুষিত করেছে, সেটা আমরা সবাই জানি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, রাতারাতি কোনো সরকারের পক্ষে ’৭৩–এর অধ্যাদেশ বাতিল করা সম্ভব নয়। এটি ভেতর থেকে সংস্কারের বিষয়। এ জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দাবি তোলা দরকার বলেন তিনি।
সেমিনারে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অচলাবস্থা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সেখানে শিক্ষক সমিতির নেতারাই আবার প্রশাসনিক ক্ষমতায় থেকেছেন। এতে দ্বৈত ভূমিকা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থার ফাঁকফোকর দিয়ে ছাত্রদেরই বেশি ভোগান্তি হয়েছে।
কুয়েটের ঘটনায় সরকার কিছুই করেনি, এটা বলা সঠিক নয় উল্লেখ করে ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, কুয়েটের ঘটনায় সরকার দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে—একটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে, আরেকটি মন্ত্রণালয় থেকে। ইউজিসি তদন্ত করেছে আর্থিক অনিয়মসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি, মন্ত্রণালয়ের কমিটি মূলত ঘটনাগুলো কে ঘটিয়েছে, ছাত্রদের দাবি কী ছিল, দায় কার, সেটা খতিয়ে দেখেছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এখন একটি সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে, যেখানে ইউজিসি প্রতিনিধি, একজন বিশেষজ্ঞ ও ভাইস চ্যান্সেলর থাকেন। এটিকে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত রূপান্তর মনে করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে যেসব ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠেনি।
জুলাই অভ্যুত্থান শিক্ষা খাতে বিকল্প প্রশ্ন উত্থাপন করেছে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যে কাঠামোগত সমস্যা বিদ্যমান, সেগুলো নতুনভাবে চিন্তা করার দরকার।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ইউজিসির সদস্য তানজিমউদ্দীন খান। সভাপতিত্ব করেন আনু মোহম্মদ। এ সময় ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা তুলে ধরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুসমিন আফসানা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক কাজী ফরিদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিনু কিবরিয়া প্রমুখ।