Dhaka শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুল্ক কমাতে বাংলাদেশকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র : বাণিজ্য সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

শুল্ক ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হয়েছে। সংলাপে বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, শুল্ক কমাতে বাংলাদেশকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে।’

তিনি বলেন, এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে বলে আমরা দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছি।

বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আজ এবং আগামীকাল আমাদের আরও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন— জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ৮ জুলাই বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পড়ে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এটি বেড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ দাঁড়ানোর কথা ছিল, এবং পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে তা ৩৫ শতাংশে ঠেকতো। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছিলেন।

তবে বাংলাদেশ এই শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য সচিব জানান, ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই কাগজের ভিত্তিতেই ওয়াশিংটনে তিন দিনের এই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা দেশটিতে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়াবে। আলোচনায় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, বর্তমানে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা ভিয়েতনামের (১২৩ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় অনেক কম। ঘাটতির এই ব্যবধান তুলে ধরেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুকূল সিদ্ধান্ত চায়। এ ছাড়া আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আরও পণ্য আমদানি করবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, ৫ বছরে প্রতি বছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানির সমঝোতা স্মারক, সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ।

ইউএসটিআর-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যেমন ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইইউয়ের ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্য এ হার কত হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।”

তৃতীয় দফা এই আলোচনা আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে। আলোচনা সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দেশে যেন উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে : তারেক রহমান

শুল্ক কমাতে বাংলাদেশকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র : বাণিজ্য সচিব

প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

শুল্ক ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হয়েছে। সংলাপে বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, শুল্ক কমাতে বাংলাদেশকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে।’

তিনি বলেন, এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে বলে আমরা দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছি।

বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আজ এবং আগামীকাল আমাদের আরও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন— জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ৮ জুলাই বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পড়ে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এটি বেড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ দাঁড়ানোর কথা ছিল, এবং পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে তা ৩৫ শতাংশে ঠেকতো। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছিলেন।

তবে বাংলাদেশ এই শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য সচিব জানান, ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই কাগজের ভিত্তিতেই ওয়াশিংটনে তিন দিনের এই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা দেশটিতে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়াবে। আলোচনায় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, বর্তমানে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা ভিয়েতনামের (১২৩ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় অনেক কম। ঘাটতির এই ব্যবধান তুলে ধরেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুকূল সিদ্ধান্ত চায়। এ ছাড়া আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আরও পণ্য আমদানি করবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, ৫ বছরে প্রতি বছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানির সমঝোতা স্মারক, সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ।

ইউএসটিআর-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যেমন ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইইউয়ের ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্য এ হার কত হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।”

তৃতীয় দফা এই আলোচনা আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে। আলোচনা সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।