Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : 

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শালপাড়া সড়কে ছোট যমুনা নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ মাকড়িতলা গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০২৩ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এ পর্যন্ত অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কচ্ছপ গতিতে চলছে সেতুটির নির্মাণ কাজ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কখনও বন্ধ থাকে, আবার কখনও বা দুই থেকে তিন জন শ্রমিক কাজ করে। এভাবে চলতে থাকলে সেতু নির্মাণে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে। তারা বলেন, সেতুটি ভাঙার পর চলাচলের জন্য একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হলেও বর্ষায় এর কয়েকটি খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি তাদের।

জানা গেছে, গ্রামীণ সেতুর উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি-শালপাড়া সড়কের বড়মানিক মাকড়িতলা ৯০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ যৌথভাবে শুরু করে আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড ও এমডি সোহেল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার চুক্তি মূল্য ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭২ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী কাজটি শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ৮ জুলাই। প্রথমে বেশ জোরে শোরেই কাজ শুরু করে এর ঠিকাদার। সেতুটি ভেঙে ফেলার পর মানুষের চলাচলের জন্য দক্ষিণ পাশে বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। বিকল্প সেতুটির মূল সড়ক থেকে অন্তত ৮ থেকে ১০ ফুট ঢালু। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে ছোট যানবাহন ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিগত দুই বছরেও মূল সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় চলাচলের চাপে নড়ে বড়ে হয়ে পড়েছে বিকল্প সেতুটি। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেশি থাকায় স্রোতের চাপে কয়েকটি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জায়গায় জায়গায় দেবে গেছে সেতুটির ওপরের কাঠের পাটাতন। আবার যানবাহন ও মানুষের ভাড় সইতে না পেরে পুরো বিকল্প সেতুটি বাঁকা হয়ে গেছে। সড়ক থেকে সেতুতে নামতে গিয়ে যানবাহনের ব্রেক ফেল করে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

পাঁচবিবির ধরঞ্জী পলাশগড় গ্রামের পথচারী মোয়াজ্জেম সরকার বলেন, সেতুটির জন্য আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় থেকে আমরা কষ্ট করছি। কিন্তু সেতুর কাজতো এগুচ্ছে না। ইদানীং মাঝে মধ্যে দু-একজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখি। আবার ১৫ দিন বন্ধ থাকে। অথচ সেতুটির কাজ যখন শুরু হয়, তখন কিন্তু অনেক নির্মাণ শ্রমিককে কাজ করতে দেখেছি। গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কচ্ছপ গতিতে চলছে এর নির্মাণ কাজ। কেউ কেউ বলছেন এর ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। এভাবে কাজ চলতে থাকলে ৫ বছরেও সেতু নির্মাণ হবে না।

সমসাবাদ এলাকার কার্তিক চন্দ্র বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর পর বিকল্প কাঠের সেতু দিয়ে চলতে গিয়ে ভ্যানের ব্রেক ফেল করে আমার হাত ভেঙে গেছে। শুধু আমি নয়, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে প্রতিদিন এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ ঠিকমতো কাজ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হতো।

কড়িয়া গ্রামের অটোচালক মাহমুদুল হাসান রিপন বলেন, সম্প্রতি বর্ষায় নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কাঠের সেতুর কয়েকটি খুঁটির ক্ষতি হয়েছে। ফলে ঝুঁকির কারণে বিকল্প এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই থেকে আমরা যাত্রীকে নেমে দিয়ে খালি অটো নিয়ে সেতু পার হচ্ছি।

মালিদহ গ্রামের বাদাম বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্যবসার জন্য প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে পাঁচবিবি যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সেতু পার হতে খুব কষ্ট হয়। সড়ক থেকে বেশি ঢালুর কারণে সেতু পার হওয়ার পর একটু বিশ্রাম না নিলে আর চলতে পারি না। দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদারের প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান বলেন, সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ নয় চলমান আছে। যেহেতু এটি গার্ডার সেতু, সেহেতু একটা ঢালাই শেষ করে আর একটি ঢালাই দিতে গেলে বেশ সময় লাগে। এ জন্য সময় কিছুটা বেশি লাগছে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এর কাজ শেষ করা হবে।

এলজিইডির পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, ৯০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করতে সময় বেশি লাগাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সেতুটির কাজ শুরুর পর পাঁচবিবিতে দু’টি স্থানীয় নির্বাচন এবং ম্যাটেরিয়াল স্বল্পতার কারণে নির্মাণ কাজে বিলম্ব ঘটেছে। এজন্য স্থানীয়ভাবে দুর্ভোগ হলেও এটি সাময়িক। বর্তমানে কাজ চলমান আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

প্রকাশের সময় : ০৮:১৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : 

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শালপাড়া সড়কে ছোট যমুনা নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ মাকড়িতলা গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০২৩ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এ পর্যন্ত অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কচ্ছপ গতিতে চলছে সেতুটির নির্মাণ কাজ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কখনও বন্ধ থাকে, আবার কখনও বা দুই থেকে তিন জন শ্রমিক কাজ করে। এভাবে চলতে থাকলে সেতু নির্মাণে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে। তারা বলেন, সেতুটি ভাঙার পর চলাচলের জন্য একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হলেও বর্ষায় এর কয়েকটি খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি তাদের।

জানা গেছে, গ্রামীণ সেতুর উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি-শালপাড়া সড়কের বড়মানিক মাকড়িতলা ৯০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ যৌথভাবে শুরু করে আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড ও এমডি সোহেল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার চুক্তি মূল্য ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭২ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী কাজটি শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ৮ জুলাই। প্রথমে বেশ জোরে শোরেই কাজ শুরু করে এর ঠিকাদার। সেতুটি ভেঙে ফেলার পর মানুষের চলাচলের জন্য দক্ষিণ পাশে বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। বিকল্প সেতুটির মূল সড়ক থেকে অন্তত ৮ থেকে ১০ ফুট ঢালু। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে ছোট যানবাহন ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিগত দুই বছরেও মূল সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় চলাচলের চাপে নড়ে বড়ে হয়ে পড়েছে বিকল্প সেতুটি। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেশি থাকায় স্রোতের চাপে কয়েকটি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জায়গায় জায়গায় দেবে গেছে সেতুটির ওপরের কাঠের পাটাতন। আবার যানবাহন ও মানুষের ভাড় সইতে না পেরে পুরো বিকল্প সেতুটি বাঁকা হয়ে গেছে। সড়ক থেকে সেতুতে নামতে গিয়ে যানবাহনের ব্রেক ফেল করে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

পাঁচবিবির ধরঞ্জী পলাশগড় গ্রামের পথচারী মোয়াজ্জেম সরকার বলেন, সেতুটির জন্য আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় থেকে আমরা কষ্ট করছি। কিন্তু সেতুর কাজতো এগুচ্ছে না। ইদানীং মাঝে মধ্যে দু-একজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখি। আবার ১৫ দিন বন্ধ থাকে। অথচ সেতুটির কাজ যখন শুরু হয়, তখন কিন্তু অনেক নির্মাণ শ্রমিককে কাজ করতে দেখেছি। গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কচ্ছপ গতিতে চলছে এর নির্মাণ কাজ। কেউ কেউ বলছেন এর ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। এভাবে কাজ চলতে থাকলে ৫ বছরেও সেতু নির্মাণ হবে না।

সমসাবাদ এলাকার কার্তিক চন্দ্র বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর পর বিকল্প কাঠের সেতু দিয়ে চলতে গিয়ে ভ্যানের ব্রেক ফেল করে আমার হাত ভেঙে গেছে। শুধু আমি নয়, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে প্রতিদিন এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ ঠিকমতো কাজ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হতো।

কড়িয়া গ্রামের অটোচালক মাহমুদুল হাসান রিপন বলেন, সম্প্রতি বর্ষায় নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কাঠের সেতুর কয়েকটি খুঁটির ক্ষতি হয়েছে। ফলে ঝুঁকির কারণে বিকল্প এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই থেকে আমরা যাত্রীকে নেমে দিয়ে খালি অটো নিয়ে সেতু পার হচ্ছি।

মালিদহ গ্রামের বাদাম বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্যবসার জন্য প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে পাঁচবিবি যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সেতু পার হতে খুব কষ্ট হয়। সড়ক থেকে বেশি ঢালুর কারণে সেতু পার হওয়ার পর একটু বিশ্রাম না নিলে আর চলতে পারি না। দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদারের প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান বলেন, সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ নয় চলমান আছে। যেহেতু এটি গার্ডার সেতু, সেহেতু একটা ঢালাই শেষ করে আর একটি ঢালাই দিতে গেলে বেশ সময় লাগে। এ জন্য সময় কিছুটা বেশি লাগছে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এর কাজ শেষ করা হবে।

এলজিইডির পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, ৯০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করতে সময় বেশি লাগাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সেতুটির কাজ শুরুর পর পাঁচবিবিতে দু’টি স্থানীয় নির্বাচন এবং ম্যাটেরিয়াল স্বল্পতার কারণে নির্মাণ কাজে বিলম্ব ঘটেছে। এজন্য স্থানীয়ভাবে দুর্ভোগ হলেও এটি সাময়িক। বর্তমানে কাজ চলমান আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।