নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হাসিনাকে কোনদিন ক্ষমা করা যাবে না। হাসিনা মানবজাতির কলঙ্ক, হাসিনা মায়েরদের কলঙ্ক, তার ক্ষমা নেই বিচার হবেই।
রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর জিয়া উদ্যানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও আমরা বিএনপি পরিবারের যৌথ উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতা ঘোষণা দিয়েই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেজন্য বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে সত্যিকার অর্থে একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করা। তারা নতুন বাংলাদেশ চায়, যেখানে দুর্নীতি, ঘুষ, খুন, হত্যা ও নির্যাতন থাকবে না। মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একজন শহীদের মা, কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, যে ছেলেটিকে দেখ আমি স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন দেখেছি আমার ভষিষ্যতের; সেই ছেলেটিকে ওরা কেড়ে নিয়ে গেছে। কেড়ে নিয়ে গেছে একটা নিদারুন ভয়াবহ মর্মান্তিক পাশবিকভাবে। তাকে গুলি করে মেরেছে, পড়ে গেছে, এরপর একটা ভ্যানের মধ্যে উঠিয়েছে, বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটা না দেখে আরও ৬-৭টা লাশের সাথে তাকে পুড়িয়ে দিল। চিন্তা করতে পারেন? একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা!
তিনি বলেন, আমরা ৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম, একটা স্বাধীন দেশের জন্য। সেই দেশের প্রশাসন, যারা রাষ্ট্রর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে, যাদের বেতন আসে আমাদের প্রত্যেকের ট্যাক্সের টাকা থেকে। তারা আজ আমার ছেলেকে হত্যা করছে, পুড়িয়ে মারছে। কী নির্মম, নৃশংস, অমানবিক। এ জন্য হাসিনাকে কখনো ক্ষমা করা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনা মানব জাতির একটা কলঙ্ক। আমাদের প্রথম কাজ হবে এদের বিচার করা। দ্বিতীয় কাজ হবে শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যারা আহত হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন; তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। এটা না করলে ভবিষ্যতে জাতি আমাদের গ্রহণ করবে না। এ জন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড রেইজ করবো। সেই ফান্ড থেকে এই পরিবারগুলোকে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা সহযোগিতা করবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একজন শহীদের পিতা বললেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, এই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হবে। একটা কাঠামো তৈরি হবে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবো।’ আমরা বিশ্বস করি সেটা হবে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভিন্ন মত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে, কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করবে। এই সবগুলো মিলিয়ে আমরা একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণের কথা বলছি। যা অনেক আগেই আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন, এর মধ্যে আজকের সংস্কারের প্রত্যেকটি বিষয় রয়েছে। এটা আমরা ২০২২ সালে দিয়েছি। আমি আজ ওই তর্কে যেতে চাই না, আমার কতজন শহীদ হয়েছে, আমার কার কী হলো। কেননা আমার মনে হয়, সেটাতে স্বার্থপরতার একটা ব্যাপার রয়েছে। আমার দায়িত্ব হলো, জাতিকে আমাকে উপরে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, যারা প্রাণ দিয়েছে, তারা এটা ঘোষণা দিয়েই দিয়েছে যে এই ফ্যাসিস্টকে সরাবো, জাতিকে আমরা একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উপনিত করতে চাই। সে জন্য আমাদের লক্ষ্য একটাই আমরা একটা উদারপন্থী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। নতুন বাংলাদেশ চাই। পরিবর্তন চাই। আমরা দুর্নীতি চাই না, হত্যা চাই না, ঘুষ চাই না, নির্যাতন চাই না। মানুষ যেন স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করতে পারে সে রকম একটা রাষ্ট্র চাই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সেই লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তারেক রহমান বলেন, আশা করি, আগামী দিনের যে নির্বাচন; প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন এই সরকার যে, ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে পারবো। যে সরকার আমাদের শহীদদের মূল্যায়ণ করবে।
তিনি বলেন, মানুষের গুণ মান যত উন্নতি হবে, এ জাতি তত উন্নত হবে। আজকের এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আমার কাছে সেই ধরনের একটা কর্মসূচি, যেখানে আমরা একটি উন্নত রাষ্ট্রচিন্তার নিদর্শন দেখতে পাই। যেহেতু আজ গোটা পৃথিবী ক্লাইমেট সমস্যাই আক্রান্ত, আমাদের বাংলাদেশ আরও বেশি করে আক্রান্ত, এখানে সবুজের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনা কম। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সারাদেশে ১০ লক্ষ গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সবুজ করার একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।