‘নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। তখনো প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসেনি। রেলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, দুই ঘণ্টা পর ট্রেন ছাড়বে। এরপর তা–ও পার হয়ে যায়। আবার বলা হয় আরও দুই ঘণ্টা লাগবে, কিন্তু ট্রেন তখনো আসেনি। এভাবে দফায় দফায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছে—ট্রেন আসবে। ট্রেন আসছে আসছে করে বারবার ঘোষণা দিয়ে এসেছে ছয় ঘণ্টা পর।’
চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের যাত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন রোববার (২০ জুলাই) সকালে মুঠোফোনে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল শনিবার (১৯ জুলাই) রাত পৌনে ১০টায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় ছয় ঘণ্টা পর এই ট্রেন ছেড়েছে আজ রোববার ভোর চারটায়। এই দীর্ঘ সময় রেলস্টেশনে যাত্রীদের ট্রেনটির অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। রাতের বেলায় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
শুধু দেলোয়ার হোসেন নন, তাঁর মতো আরও অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের কেউ চাকরিজীবী, কারও বাড়ি সিলেট। আবার কেউ কেউ ঘুরতে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে কর্মদিবস শুরুর আগের দিন হওয়ায় এই ট্রেনে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। পরদিন অফিস ধরার তাড়া ছিল তাঁদের। কিন্তু এই ট্রেনের সময়সূচি নড়বড় হওয়ায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটে পৌঁছায়নি বলে মুঠোফোনে জানান যাত্রীরা। দুপুর ১২টার আগে পৌঁছানো সম্ভব নয় বলেও জানান তাঁরা। এই ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী, সকাল পৌনে ছয়টায় সিলেট স্টেশনে পৌঁছার কথা।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আবু জাফর মজুমদার বলেন, কুমিল্লায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়েছে। সে ইঞ্জিন উদ্ধার করতে সময় লেগেছে। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস দেরিতে ছেড়েছে। এতে যাত্রীদের অনেক বেশি ভোগান্তি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ যদি আগেভাগে জানিয়ে দিত এ ট্রেন ৬ ঘণ্টা দেরিতে আসবে, তাহলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা বা বাসে চলে যেতাম। কিন্তু তারা বারবার সময় পরিবর্তন করে যাত্রীদের আশায় রেখেছে রাত ১২টার মধ্যে ট্রেন আসবে। কিন্তু আসেনি। আর রাত ১২টার পর বাসে করে যাওয়ার অবস্থাও ছিল না। আবার সড়কে ছিনতাইকারীদের ভয়ে অনেকে যাত্রা বাতিল করে নিজ বাসায়ও ফেরত যাননি। এই পুরো সময় স্টেশনে বসে কাটাতে হয়েছে। কী যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, তা বলে বর্ণনা করা যাবে না।
তিনজন যাত্রী জানান, ট্রেন নির্ধারিত সময়ে না ছাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হয়েছে শিশু ও নারী যাত্রীদের। আর বয়স্ক মানুষেরও কষ্টের শেষ ছিল না। দীর্ঘক্ষণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে থাকার কারণে মশার কামড় খেতে হয়েছে। ছিল কুকুরের উৎপাতও।
এদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা এক্সপ্রেসও নির্ধারিত সময়ের প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) রাত সোয়া ১১টায় এই ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু এই ট্রেন ছেড়েছে দিবাগত রাত আড়াইটায়। যদিও রেলওয়ে যাত্রীদের খুদে বার্তায় জানিয়েছিল, ট্রেন এক ঘণ্টা দেরি করতে পারে। কিন্তু এরপর আরও সোয়া দুই ঘণ্টা বেশি দেরি করেছে।
ট্রেনের একজন যাত্রী আরিফুল ইসলাম জানান, রাত ১১টায় তিনি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন কেন ছাড়ছে না, তার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, ট্রেনের একটি বগিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আবার অনেক বগিতে বাতি ও পাখা কিছুই চলছিল না। পরে তা ঠিক করা হয়। আর এই ট্রেন ভোর সোয়া পাঁচটায় চট্টগ্রাম স্টেশনে আসার কথা থাকলেও এসেছে সকাল পৌনে নয়টায়।