রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে আটকে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সড়ক সংস্কার কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় অনেক সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বর্ষায় কাদা-পানিতে চলাচল হয়ে উঠেছে দুঃসাধ্য। ফলে যাতায়াতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পথচারীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে থেকে স্টেডিয়াম গেট পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ক্লাস করতে যাতায়াত করেন শামসুজ্জোহা, সোহরাওয়ার্দী ও মাদার বখ্শ হলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মেহেরচণ্ডী এলাকার ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ইটের সলিং ভেঙে যাওয়ায় রিকশাচালকরা পর্যন্ত চলাচল করতে চান না। গেলেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের পেছন থেকে চারুকলার গেট পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তাটির পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের মোড় থেকে শুরু করে হবিবুর রহমান হল পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিনোদপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী হল পুকুর পাড় পর্যন্ত, পশ্চিমপাড়ায় রোকেয়া হলের উত্তর পাশ থেকে ফ্লাইওয়ার পর্যন্ত, শামসুজ্জোহা হল থেকে বধ্যভূমি পর্যন্ত সড়কগুলো ভেঙে গিয়ে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব রাস্তায় বৃষ্টি হয়ে কর্দমাক্ত ও পানি জমে থাকে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, এতদিন শুনেছি ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় রাস্তা মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ালেও ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হচ্ছে না। কয়েকটি রাস্তার অবস্থা এমন— হাঁটাও দায়, ভেবে-চিন্তে পা ফেলতে হয়। চলতি অর্থবছরে নতুন বাজেট এসেছে। শিগগিরই যেন রাস্তাগুলো মেরামত করে ভোগান্তি থেকে রক্ষা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা হল, এএইচএম কামারুজ্জামান হল, ১০তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুল ও অডিটোরিয়াম সংস্কারসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে বড় চারটি ভবনের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বলছে, চলমান ভবন নির্মাণ এবং বাজেট ঘাটতির কারণে রাস্তাগুলোর সংস্কার সম্ভব হয়নি। তবে আগের অর্থবছরের কিছু বাজেট এবং চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ দিয়ে মেরামত শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাস্তার টেন্ডার ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদ বলেন, ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি এই রাস্তার অবস্থা। রিকশা চলাচল না করায় আমাদের পায়ে হেঁটে যাওয়া লাগে, সেটাও অনেক কষ্টকর। সংস্কারের অভাবে এভাবেই যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাস্তাগুলো। প্রশাসনের লোকজন গাড়িতে চলাফেরা করে বলেই বিষয়টা তাদের চোখে পড়ে না।
শিক্ষার্থী অনিক হাসান বলেন, নানা অজুহাতে রাস্তা সংস্কার পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিদিন আমাদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দ্রুত সংস্কার দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাস্তাগুলো আসলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাজেট অনুমোদনের পর ইতোমধ্যে কয়েকটি রাস্তার টেন্ডার হয়ে গেছে। তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। তবে বর্ষায় কাজ করলে ভোগান্তি আরো বাড়বে, তাই কিছুটা সময় নিচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, নতুন অর্থবছরে সাতটি রাস্তা সংস্কারে ১কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি কাজ ফাইন্যান্স কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। মতিহার হলের সামনের রাস্তায় কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, এ বছরেই প্রায় সব রাস্তার কাজ শেষ হবে।