ফেনী জেলা প্রতিনিধি :
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই ফের পানিতে ডুবেছে ফেনীর জনপদ। তবে বৃষ্টি বন্ধ ও রোদ ওঠায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
জানা যায়, জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে লোকালয়ে এখনো পানি থাকলেও অন্য দুই উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। দুর্গত এলাকায় পানি নামার সঙ্গে ফুটে উঠেছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। কিছু কিছু এলাকায় হাঁটুসমান পানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে। অনেক এলাকায় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় গন্তব্যে পাড়ি দেওয়া মানুষজনের মনে স্বস্তি ফিরেছে। ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। এছাড়া ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা এলাকার আংশিক অংশে এখনো পানি নামেনি। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান পানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১১২টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে এরই মধ্যে ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন। দুর্গত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ২৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় এখন পর্যন্ত পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান তারা।
ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, নদীর পাড়ে থাকি বলে প্রতি বছরই এ দুঃখ সইতে হয়। বারবার সব তছনছ হয়ে গেলে আমরা কীভাবে বাঁচব?
মঞ্জুনা আক্তার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার পানি অনেক ধীরগতিতে নামছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে এখনো পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমর এ পরিস্থিতির একটি স্থায়ী সমাধান চাই। প্রতিবছর ভাঙনের পর সরকারের লোকজন এসে টেকসই বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে তা আর বাস্তবায়ন হয়না।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি কিছুটা বেশি। বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এরআগে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি অংশে ভাঙনের দেখা দেয়।