Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাবি শিক্ষার্থীর বাবা নিহত : ক্ষতিপূরণের দাবিতে মৌমিতা পরিবহনের ১০ বাস আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকার বকশীবাজারে মৌমিতা পরিবহনের বাসের ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর বাবা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে ওই পরিবহনের ১০টি বাস আটকে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বাসগুলো আটকে রাখতে দেখা গেছে। এর আগে, বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) থেকে বাসগুলো আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিহত জহুরুল হক সেলিম (৫২) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাতের বাবা। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।

রিফাতের সহপাঠীরা জানান, গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে মৌমিতা পরিবহনের দুটি বাস যাত্রী তুলতে গিয়ে প্রতিযোগিতা করার সময় দুই বাসের মাঝে পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন রিফাতের বাবা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রিফাতের সহপাঠী হাসিবুল হাসান বলেন, রাষ্ট্রের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। রিফাতের ছোট ভাই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, তার চিকিৎসা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য ঘাতক মৌমিতা পরিবহনের বাস মালিকপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

‎তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বাস সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এতে বিভাগের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মৌমিতা পরিবহনের ১০টি বাস আটক করেছে। দ্রুত সমাধান না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসুচিতে যাব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান সায়েম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, রিফাতের বাবাকে মৌমিতা পরিবহনের ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলেছে। রিফাতের একটি ১১ বছর বয়সী ছোট ভাই রয়েছে, যে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। মূলত তার চিকিৎসার জন্য ঈশ্বরদী থেকে তার বাবা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। রিফাতের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। এই পরিবারের দায়িত্ব এখন কে নেবে? আমরা চাই, মৌমিতা পরিবহন এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাসগুলো নিয়ে যাবে।

একটি বাসের চালক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের বাসগুলো আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছেন। ছাত্ররা বলছেন, একজন ছাত্রের বাবাকে ঢাকায় আমাদের একটি বাস চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। বিষয়টি আমাদের মালিকদের জানানো হয়েছে।

বাসগুলোর এক চালক আনোয়ার বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের ফোন ও চাবি নিয়ে নিলেও বিকেল ৫টার দিকে ফোনগুলো ফেরত দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কোনো অর্থ দাবি করেনি।

মৌমিতা পরিবহনের সাভার লাইনম্যান সুমন বলেন, আমরা ঘটনা সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের এক শিক্ষার্থীর বাবা নিহত হয়েছেন। যদিও ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে, শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাস মালিকদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ হয়নি, কীভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা যায়, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

জাবি শিক্ষার্থীর বাবা নিহত : ক্ষতিপূরণের দাবিতে মৌমিতা পরিবহনের ১০ বাস আটক

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকার বকশীবাজারে মৌমিতা পরিবহনের বাসের ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর বাবা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে ওই পরিবহনের ১০টি বাস আটকে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বাসগুলো আটকে রাখতে দেখা গেছে। এর আগে, বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) থেকে বাসগুলো আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিহত জহুরুল হক সেলিম (৫২) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাতের বাবা। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।

রিফাতের সহপাঠীরা জানান, গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে মৌমিতা পরিবহনের দুটি বাস যাত্রী তুলতে গিয়ে প্রতিযোগিতা করার সময় দুই বাসের মাঝে পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন রিফাতের বাবা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রিফাতের সহপাঠী হাসিবুল হাসান বলেন, রাষ্ট্রের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। রিফাতের ছোট ভাই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, তার চিকিৎসা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য ঘাতক মৌমিতা পরিবহনের বাস মালিকপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

‎তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বাস সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এতে বিভাগের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মৌমিতা পরিবহনের ১০টি বাস আটক করেছে। দ্রুত সমাধান না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসুচিতে যাব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান সায়েম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, রিফাতের বাবাকে মৌমিতা পরিবহনের ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলেছে। রিফাতের একটি ১১ বছর বয়সী ছোট ভাই রয়েছে, যে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। মূলত তার চিকিৎসার জন্য ঈশ্বরদী থেকে তার বাবা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। রিফাতের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। এই পরিবারের দায়িত্ব এখন কে নেবে? আমরা চাই, মৌমিতা পরিবহন এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাসগুলো নিয়ে যাবে।

একটি বাসের চালক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের বাসগুলো আটক করে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছেন। ছাত্ররা বলছেন, একজন ছাত্রের বাবাকে ঢাকায় আমাদের একটি বাস চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। বিষয়টি আমাদের মালিকদের জানানো হয়েছে।

বাসগুলোর এক চালক আনোয়ার বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের ফোন ও চাবি নিয়ে নিলেও বিকেল ৫টার দিকে ফোনগুলো ফেরত দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কোনো অর্থ দাবি করেনি।

মৌমিতা পরিবহনের সাভার লাইনম্যান সুমন বলেন, আমরা ঘটনা সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের এক শিক্ষার্থীর বাবা নিহত হয়েছেন। যদিও ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে, শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাস মালিকদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ হয়নি, কীভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা যায়, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।