মাগুরা জেলা প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। এই দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী দোসরদের জায়গা দেওয়া হবে না। জুলাই সনদ ঘোষণার আগে কোনো নির্বাচন ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে মাগুরা শহরের ভায়না মোড়ে পদযাত্রা শেষে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, আপনাদের সন্তানরা জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আমরা আর কোনো দখলদার, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের হাতে এই দেশের শাসনভার তুলে দেব না। ভিনদেশী প্রভুদের ইশারায় যারা কথা বলে, আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করব।
এনসিপি) আহ্বায়ক বলেন, যতদিন পর্যন্ত না দোষীদের বিচার হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
তিনি বলেন, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। আমরা আগামী ৫ আগস্টে মধ্যে এর বাস্তবায়ন চাই। এই দাবিতে আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ফ্যাসিস্টের বিচার, জুলাই সনদ ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া এদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।
নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ ঘোষণার আগে কোনো নির্বাচন ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। আগে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে। খুনিদের বিচার, সংস্কার ও জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের পাঁয়তারা করা হলে আবারও গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
এনসিপি) আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশ নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের নতুন সংবিধান প্রয়োজন। এ ছাড়া যেকোনো দেশের প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে। নতুন সংবিধান আমাদের দাবি। সেটা এখনো হচ্ছে না। মৌলিক সংস্কার নিয়ে এখনো টালবাহানা চলছে। মাগুরাবাসী সোচ্চার হোন। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে নাহিদ বলেন, জুলাই সনদ আমরা আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে দেখতে চাই। যদি জুলাই সনদ সরকার এই এক বছরের মধ্যে না দেয়, তবে আমরা সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে নিয়ে মাঠে নামব। আমরা ৩ আগস্ট ঢাকা শহীদ মিনারে থাকব। আপনার এই সময়ে ঢাকা আসেন। ফ্যাসিস্টের বিচার, জুলাই সনদ ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া এদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, মাগুরায় যারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, লুটতরাজকারী তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্যই আমাদের এই লড়াই। এখানে মাগুরার জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে ১০ জন শহীদ হয়েছেন। সব শহীদ পরিবারসহ যাঁরা নানাভাবে আহত হয়েছেন, তাঁদের জন্যই আমাদের এই লড়াই। মাগুরার উন্নয়ন নিয়ে এনসিপি আবারও মাগুরায় আসবে। জুলাই শহীদদের রক্তের মর্যাদা আমাদের সকলকে দিতে হবে। বৈষম্যহীন দেশ গড়ার জন্যই আমাদের এই লড়াই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি তাদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই মাগুরাতে একটি কমিটি করবে। তারা আমাদের সঙ্গে আপনাদের এলাকার নানা বিষয়ে নিয়ে যুক্ত থাকবে। মাগুরাবাসীর যে সকল সমস্যা সে সকল সমস্যার সমাধানে এনসিপি নেতৃবৃন্দ আপনাদের পাশে থাকবে।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে মাগুরায় পদযাত্রা শুরু করে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। মাগুরা শহরের উপজেলা চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি শহরের চৌরঙ্গী মোড় হয়ে ঢাকা রোড ঘুরে ভায়না মোড়ে এসে পথসভায় মিলিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, আকতার হোসেন, সারজিস আলম, ডা. তাসনীম জারা, সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা প্রমুখ।
পরে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর নড়াইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর আগে ঝিনাইদহ সফর শেষে বেলা ১টা ৩০ মিনিটের দিকে মাগুরা পৌঁছায় এনসিপি নেতাদের বহর।