Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
গণপরিবহনে অগ্রিম কর বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, আমরা ভাড়া বাড়াতে চাই না : সাইফুল আলম

বাড়তে পারে ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সড়ক পরিবহনে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস, মিনিবাস, পণ্য পরিবহন, ট্রাক, প্রাইমমুবারসহ যাবতীয় পরিবহন যানের জন্য বর্ধিত কর নির্ধারিণ করেছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থ বছর থেকেই এসব যানের জন্য বর্ধিত কর দিতে হবে। চলতি বছরের বাজেট অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত ৫২টির বেশি আসনবিশিষ্ট বাস সারা বছর যত আয়ই করুক ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বছরে একবার ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম কর দিতে হবে। এ ধরনের যানবাহনের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর দিতে হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা। ৫২টির অধিক আসন নয় এমন বাসের ক্ষেত্রে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে দিতে হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা।

২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে এ করহার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে যাত্রীর ওপর খরচের চাপ পড়তে পারে। বাড়তে পারে বাস ভাড়া। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বর্ধিত কর আরোপ না করার জন্য অর্থ উপদেষ্টার কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহনে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস, মিনিবাস, পণ্য পরিবহন, ট্রাক, প্রাইম মুভারসহ যাবতীয় যান নানাবিধ অসুবিধার মাঝে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে বর্তমানে ১২১ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত আমদানীকৃত যন্ত্রাংশ যেমন টায়ার, টিউব, লুব্রিকেন্ট, ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি, ব্রেকসুসহ সকল যন্ত্রাংশের দাম প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গাড়ি ভাড়া আগের মতোই বহাল আছে। এমতবস্থায় পরিবহন মালিকেরা অত্যান্ত কষ্টে এবং দুর্বিসহ অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তাই এই খাতে নতুন করে কর/ট্যাক্স বৃদ্ধি করলে কোনোভাবেই মালিকদের পক্ষে প্রদান করা সম্ভব হবে না। বরং পরিবহন সেক্টরে যে কোন সময় অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রীর নিরাপত্তায় বরাদ্দ না বাড়িয়ে কেবল করহার বাড়ানো কাম্য হতে পারে না। তবে এনবিআরের দাবি করেছে, এতে করে যাত্রীর ওপর চাপ পড়বে না।
চলতি বছরের বাজেটের অর্থ অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের জন্য দিতে হবে ৫০ হাজার, ডাবল ডেকার বাস ২৫ হাজার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস বা কোস্টার ২৫ হাজার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন মিনিবাস বা কোস্টার ১২ হাজার ৫০০, প্রাইম মুভার ৩৫ হাজার, পাঁচ টনের অধিক পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক লরি ৩০ হাজার; দেড় টনের অধিক তবে পাঁচ টনের অধিক নয় এমন পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক-লরি ১৫ হাজার, দেড় টনের অধিক নয় এমন পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক লরি ৭ হাজার ৫০০, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, ম্যাক্সি বা অটোরিকশা ৭ হাজার ৫০০, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সিক্যাব ১৫ হাজার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন ট্যাক্সিক্যাব ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পরিবহন খাতে অগ্রিম আয়কর বাড়ানো হলেও আমদানির ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে ১০-১৫ আসনের মাইক্রোবাসে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি (এসডি) বা সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং ১৬-৪০ আসনের যাত্রীবাহী বাসের ক্ষেত্রে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) বা আমদানি শুল্ক ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি মোটরযানটি সরকার, সরকার বা স্থানীয় সরকারের অধীন কোনো প্রকল্প, কর্মসূচি বা কার্যক্রম; কোনো বৈদেশিক কূটনীতিক, বাংলাদেশে কোনো কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘ ও তার অঙ্গসংগঠনের দপ্তরগুলো; বাংলাদেশের কোনো বিদেশী উন্নয়ন অংশীজন এবং তার সংযুক্ত দপ্তর বা দপ্তরগুলো; ধারা ১৬৬-এর উপধারা (২) অনুসারে রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত করদাতারা, অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে না মর্মে বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণকারী কোনো প্রতিষ্ঠান হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর সংগ্রহ করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আন্ত্র:জেলা রুটে চলাচলকারি একজন বাস মালিক বলেন, আমাদের সব গাড়ি ৪০ আসনের। এখন প্রতি গাড়িতে ১১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। আগামী অর্থবছরে বাড়তি করের চাপও বাড়বে। সেটার কিছু প্রভাব তো যাত্রীদের ওপর পড়বেই। বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণ করে তেলের দামের ওপর। ভাড়া নির্ধারণের সময় অন্য সবকিছু হিসাব করলে আমাদের উপকার হতো।

আরেকজন মালিক বলেন, ঢাকায় যেসব বাস চলে, মালিকরা অনেকে চালাতেই পারছেন না। বিনিয়োগের তুলনায় তাদের আয় লাভজনক নয়। এ পরিমাণ টাকা অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে বেশি লাভ করতেন। এ করহার আরো কমানো দরকার। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর পথ খরচ অনেক। ছয় মাস অন্তর চাকা ও টায়ার পরিবর্তন করতে হয়। জ্বালানি খরচ বেড়েছে। কর বাড়লেও বাস মালিকরা চাইলেই ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। এখানে সরকারের বিষয় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, আমরা ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে নই। ২০২২ সালে একবার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল, এরপর আর ভাড়া বাড়েনি। অথচ ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। তার মানে আমাদের পরিবহন যান পরিচালনার খরচ গত চার বছরে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, পরিবহন ব্যবসা এখন অনেকটাই অলাভজনক। খুরচা যন্ত্রাংশ থেকে সব কিছুর দাম এই চার বছরে অনেক বেড়েছে। বিআরটিএ’এর ১৮ ধারা অনুযায়ী চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়ায় আমরা চালক সমস্যায় ভুগছি। দক্ষ লাইসেন্সধারী চালক পাওয়া এখন অনেক কঠিন।

তিনি বলেন, নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও আমরা পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এভাবে অগ্রিম কর বৃদ্ধি করা হলে ট্রাক, লরি, প্রাইম মুভার, বাসসহ গোটা পরিবহন সেক্টরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সরকার যদি আপনাদের দাবি না মেনে বর্ধিত কর বহাল রাখে, তাহলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল আলম বলেন, আমরা সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আলোচনা চলছে। আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নিবে।

তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টর আসলে পাবলিক ইউটিলিটি সেক্টর-এটা সরকারকে বুঝতে হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ইউটিলিটি সেক্টর হিসেবে পরিবহন সেক্টরকে সরকার নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। আমরা মনে করি, এটা সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে যে পরিবহন সেক্টরকে সহায়তা করা। আমরা এখনও আশাবাদী সরকার সেটা বুঝবে এবং আমাদের দাবি মেনে নিবে। তিনি আবারও উল্লেখ করেন, আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করে-এর দায় যাত্রী বা জনসাধারণের উপর ফেলতে চাই না।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গণপরিবহনে অগ্রিম কর বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, আমরা ভাড়া বাড়াতে চাই না : সাইফুল আলম

বাড়তে পারে ভাড়া

প্রকাশের সময় : ০৫:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সড়ক পরিবহনে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস, মিনিবাস, পণ্য পরিবহন, ট্রাক, প্রাইমমুবারসহ যাবতীয় পরিবহন যানের জন্য বর্ধিত কর নির্ধারিণ করেছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থ বছর থেকেই এসব যানের জন্য বর্ধিত কর দিতে হবে। চলতি বছরের বাজেট অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত ৫২টির বেশি আসনবিশিষ্ট বাস সারা বছর যত আয়ই করুক ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বছরে একবার ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম কর দিতে হবে। এ ধরনের যানবাহনের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর দিতে হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা। ৫২টির অধিক আসন নয় এমন বাসের ক্ষেত্রে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে দিতে হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা।

২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে এ করহার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে যাত্রীর ওপর খরচের চাপ পড়তে পারে। বাড়তে পারে বাস ভাড়া। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বর্ধিত কর আরোপ না করার জন্য অর্থ উপদেষ্টার কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহনে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস, মিনিবাস, পণ্য পরিবহন, ট্রাক, প্রাইম মুভারসহ যাবতীয় যান নানাবিধ অসুবিধার মাঝে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে বর্তমানে ১২১ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত আমদানীকৃত যন্ত্রাংশ যেমন টায়ার, টিউব, লুব্রিকেন্ট, ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি, ব্রেকসুসহ সকল যন্ত্রাংশের দাম প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গাড়ি ভাড়া আগের মতোই বহাল আছে। এমতবস্থায় পরিবহন মালিকেরা অত্যান্ত কষ্টে এবং দুর্বিসহ অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তাই এই খাতে নতুন করে কর/ট্যাক্স বৃদ্ধি করলে কোনোভাবেই মালিকদের পক্ষে প্রদান করা সম্ভব হবে না। বরং পরিবহন সেক্টরে যে কোন সময় অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রীর নিরাপত্তায় বরাদ্দ না বাড়িয়ে কেবল করহার বাড়ানো কাম্য হতে পারে না। তবে এনবিআরের দাবি করেছে, এতে করে যাত্রীর ওপর চাপ পড়বে না।
চলতি বছরের বাজেটের অর্থ অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের জন্য দিতে হবে ৫০ হাজার, ডাবল ডেকার বাস ২৫ হাজার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস বা কোস্টার ২৫ হাজার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন মিনিবাস বা কোস্টার ১২ হাজার ৫০০, প্রাইম মুভার ৩৫ হাজার, পাঁচ টনের অধিক পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক লরি ৩০ হাজার; দেড় টনের অধিক তবে পাঁচ টনের অধিক নয় এমন পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক-লরি ১৫ হাজার, দেড় টনের অধিক নয় এমন পেলোড ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট ট্রাক, লরি বা ট্যাংক লরি ৭ হাজার ৫০০, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, ম্যাক্সি বা অটোরিকশা ৭ হাজার ৫০০, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সিক্যাব ১৫ হাজার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন ট্যাক্সিক্যাব ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পরিবহন খাতে অগ্রিম আয়কর বাড়ানো হলেও আমদানির ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে ১০-১৫ আসনের মাইক্রোবাসে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি (এসডি) বা সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং ১৬-৪০ আসনের যাত্রীবাহী বাসের ক্ষেত্রে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) বা আমদানি শুল্ক ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি মোটরযানটি সরকার, সরকার বা স্থানীয় সরকারের অধীন কোনো প্রকল্প, কর্মসূচি বা কার্যক্রম; কোনো বৈদেশিক কূটনীতিক, বাংলাদেশে কোনো কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘ ও তার অঙ্গসংগঠনের দপ্তরগুলো; বাংলাদেশের কোনো বিদেশী উন্নয়ন অংশীজন এবং তার সংযুক্ত দপ্তর বা দপ্তরগুলো; ধারা ১৬৬-এর উপধারা (২) অনুসারে রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত করদাতারা, অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে না মর্মে বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণকারী কোনো প্রতিষ্ঠান হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর সংগ্রহ করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আন্ত্র:জেলা রুটে চলাচলকারি একজন বাস মালিক বলেন, আমাদের সব গাড়ি ৪০ আসনের। এখন প্রতি গাড়িতে ১১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। আগামী অর্থবছরে বাড়তি করের চাপও বাড়বে। সেটার কিছু প্রভাব তো যাত্রীদের ওপর পড়বেই। বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণ করে তেলের দামের ওপর। ভাড়া নির্ধারণের সময় অন্য সবকিছু হিসাব করলে আমাদের উপকার হতো।

আরেকজন মালিক বলেন, ঢাকায় যেসব বাস চলে, মালিকরা অনেকে চালাতেই পারছেন না। বিনিয়োগের তুলনায় তাদের আয় লাভজনক নয়। এ পরিমাণ টাকা অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে বেশি লাভ করতেন। এ করহার আরো কমানো দরকার। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর পথ খরচ অনেক। ছয় মাস অন্তর চাকা ও টায়ার পরিবর্তন করতে হয়। জ্বালানি খরচ বেড়েছে। কর বাড়লেও বাস মালিকরা চাইলেই ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। এখানে সরকারের বিষয় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, আমরা ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে নই। ২০২২ সালে একবার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল, এরপর আর ভাড়া বাড়েনি। অথচ ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। তার মানে আমাদের পরিবহন যান পরিচালনার খরচ গত চার বছরে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, পরিবহন ব্যবসা এখন অনেকটাই অলাভজনক। খুরচা যন্ত্রাংশ থেকে সব কিছুর দাম এই চার বছরে অনেক বেড়েছে। বিআরটিএ’এর ১৮ ধারা অনুযায়ী চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়ায় আমরা চালক সমস্যায় ভুগছি। দক্ষ লাইসেন্সধারী চালক পাওয়া এখন অনেক কঠিন।

তিনি বলেন, নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও আমরা পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এভাবে অগ্রিম কর বৃদ্ধি করা হলে ট্রাক, লরি, প্রাইম মুভার, বাসসহ গোটা পরিবহন সেক্টরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সরকার যদি আপনাদের দাবি না মেনে বর্ধিত কর বহাল রাখে, তাহলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল আলম বলেন, আমরা সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আলোচনা চলছে। আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নিবে।

তিনি বলেন, পরিবহন সেক্টর আসলে পাবলিক ইউটিলিটি সেক্টর-এটা সরকারকে বুঝতে হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ইউটিলিটি সেক্টর হিসেবে পরিবহন সেক্টরকে সরকার নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। আমরা মনে করি, এটা সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে যে পরিবহন সেক্টরকে সহায়তা করা। আমরা এখনও আশাবাদী সরকার সেটা বুঝবে এবং আমাদের দাবি মেনে নিবে। তিনি আবারও উল্লেখ করেন, আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করে-এর দায় যাত্রী বা জনসাধারণের উপর ফেলতে চাই না।