স্পোর্টস ডেস্ক :
দিল্লিতে চলমান ২১তম দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টার দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়েছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান দাবাড়ু রানী হামিদ। তবে তার ভ্রমণ এখন এক বিড়ম্বনা। কারণ ভ্রমণসঙ্গী আরেক দাবাড়ু আসিয়া সুলতাকে ভিসার নিয়ম ভঙ্গ করায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ভারতীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। ৮০ বছর বয়েসী প্রৌঢ় রানী এজন্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর।
এই ঘটনায় প্রচণ্ড মর্মাহত রানী হামিদ ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, আমার খুব খারাপ লাগছে। যে মানুষটি আমার সঙ্গে এসেছিল, তাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুরো রাত তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, তার ব্যাগও দেওয়া হয়নি। পরদিন জোর করে তাকে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, সুলতানা এর আগে মেডিকেল ভিসায় ভারতে এসে কলকাতার একটি দাবা ইভেন্টে অংশ নিয়ে ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছিলেন, যার কারণে ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) কর্তৃক তার নাম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুলতানাকে সারারাত বিমানবন্দর অভিবাসন কেন্দ্রে তার মালপত্র ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছিল এবং পরের দিন তাকে দ্বিগুণ দামে ফিরতি টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয়।
এই ঘটনা রানী হামিদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, তাকে দৃশ্যত বিচলিত দেখাচ্ছিল। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়া-কে বলেন, আমি খুব মর্মাহত। আমার সঙ্গে যে এসেছিল তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এবং তাকে সারারাত অভিবাসন কেন্দ্রে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তার মালপত্রের কোনো অ্যাক্সেস ছিল না এবং তাকে বেশি দাম দিয়ে একটা টিকেট কিনতে হয়। আমার মন বিক্ষিপ্ত, এবং আমি খেলায় মনোযোগ দিতে পারছি না।
মানসিক চাপের কারণে রানী টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ভালো খেলতে পারেননি, ছয় রাউন্ড থেকে মাত্র একটি জয় এবং একটি ড্র নিয়ে ধুঁকছেন।
বয়সজনিত কারণে ৮০ বছর বয়েসী রানী বিদেশে খেলতে গেলে একজন সঙ্গী নিয়ে যান। একা ভ্রমণ এড়িয়ে চলা রানী ভারতীয় ও বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, ‘তার পাসপোর্ট এবং কাগজপত্র সব ঠিক ছিল, তবুও তাকে আগের সফরে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। সে তখন জানতও না যে এটি (মেডিকেল ভিসায় গিয়ে ম্যাচ খেলা) একটি লঙ্ঘন।’
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার (ডব্লিউআইএম) খেতাব পাওয়া রানী হামিদ আরও বলেন, তার পাসপোর্টে কোনও সমস্যা ছিল না। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক ছিল। তারপরও তাকে বলা হলো, আগের বার সে মেডিক্যাল ভিসায় এসেছিল কিন্তু দাবা খেলায় অংশ নিয়েছিল। সেটাই নাকি অপরাধ। অথচ তাকে তখন কেউ বলেনি এটা বেআইনি। আগে জানলে সে কখনও আসতো না। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনকে আগেই জানানো উচিত ছিল।
তিনি বলেন, আমি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের অনেক অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা জরিমানা করেন, ১০০ ডলার, ২০০ ডলার, যাই হোক—কিন্তু ওকে খেলতে দিন, মাত্র সাত দিনের জন্য। সে কোনও অপরাধ করেনি। কাউকে হত্যা করেনি, চুরি করেনি, ডাকাতিও করেনি। শুধু দাবা খেলেছে।
তবে এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও দিল্লি দাবা অ্যাসোসিয়েশনের আতিথেয়তার প্রশংসা করেছেন তিনি। দিল্লির ছত্রপুরে অবস্থিত টিভোলি রিসোর্টে আয়োজিত প্রতিযোগিতার ভেন্যু ও আবাসন একই স্থানে হওয়ায় তিনি খেলায় অংশ নিতে পেরেছেন বলে জানান।
রানী হামিদ বলেন, খুব আরামদায়ক পরিবেশ। আমার কক্ষ থেকে খেলার স্থান মাত্র ৫ মিনিট হাঁটার পথ। আয়োজকরা আমাদের যেভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং টিকিট পাঠিয়েছে তাতে আমি কৃতজ্ঞ।
এ বিষয়ে দিল্লি দাবা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভরত সিং চৌহান বলেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এ ধরনের ভিসা সমস্যা প্রায়ই হয়। সম্ভবত আগেরবার আছিয়া চিকিৎসা ভিসায় এসেছিলেন এবং দাবা খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এর ফলে কেউ হয়তো অভিযোগ করেছেন। তাই এফআরআরও তাকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে। এসব সমস্যা বড় ইভেন্ট আয়োজনের অংশ হিসেবেই দেখতে হয়।
এদিকে রানী হামিদের দিল্লির এই টুর্নামেন্ট শেষ করে মুম্বাইয়ে আরেকটি টুর্নামেন্ট খেলার কথা। আছিয়া দেশে চলে আসায় তার মুম্বাইয়ে খেলা সম্ভব হচ্ছে না। রানী হামিদের দ্রুত সময়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন তার বড় ছেলে সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদ, আম্মার বিদেশে একা থাকা অনেক কষ্ট। আছিয়া মায়ের সঙ্গে কয়েকটি টুর্নামেন্টে সফরসঙ্গী হয়েছিল। এখন আছিয়া না থাকায় মায়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তিনি অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। ভালো খেলতেও পারছেন না। খুব চিন্তায় রয়েছি আমরা।