Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেশের সর্ব্বোচ আদালত এ রায় দেন।

আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, ব্যরিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম।

এর ফলে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের সিদ্দান্ত বৈধ বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবীরা।
এর আগে গত ১৪ মে এ মামলায় আপিল শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

ওইদিন আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় আদালত আপিল মামলাটি খারিজ করে দেন।

এরপর আপিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করা হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য রিস্টোর করেছেন অর্থাৎ পুনরুজ্জীবন করেছেন।

এরপর ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল। চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষে মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।

রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।

এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দু’বার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দু’বার তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় জামায়াত। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।

তবে এ রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে গত বছর জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে ছাত্র-জনতা সরকার পতনের দাবি তোলে। এর মধ্যে ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে। এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মাদ্রিদ অধ্যায় শেষ করে মদ্রিচ এখন ইতালির ক্লাবে

নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী

প্রকাশের সময় : ১০:৪১:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেশের সর্ব্বোচ আদালত এ রায় দেন।

আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, ব্যরিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম।

এর ফলে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের সিদ্দান্ত বৈধ বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবীরা।
এর আগে গত ১৪ মে এ মামলায় আপিল শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

ওইদিন আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় আদালত আপিল মামলাটি খারিজ করে দেন।

এরপর আপিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করা হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য রিস্টোর করেছেন অর্থাৎ পুনরুজ্জীবন করেছেন।

এরপর ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল। চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষে মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।

রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।

এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দু’বার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দু’বার তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় জামায়াত। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।

তবে এ রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে গত বছর জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে ছাত্র-জনতা সরকার পতনের দাবি তোলে। এর মধ্যে ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে। এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে।