Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে আলোচনা সভায় মঞ্চেই বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন বিএনপির দুই নেতা

সিলেট জেলা প্রতিনিধি : 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় নগরের দরগা গেট এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সুলেমান হলে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক একাধিকবারের মেয়র।

রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সিসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিকবারের কাউন্সিলর। তিনি সিসিকের সাবেক প্যানেল মেয়রও ছিলেন। কয়েস লোদী সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, আলোচনা অনুষ্ঠানে আরিফুল হক চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আরিফুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ করলে কয়েস লোদী সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দিতে আসেন। কয়েস লোদীর বক্তব্য চলার সময় এই বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর বিএনপির কমিটির বেশিরভাগ সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ প্রথম সারির নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসসেন চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে মানুষটির জন্য এ দল সৃষ্টি হয়েছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

তার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আজকে মহানগর বিএনপির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতাকে এখানে আমরা দেখছি না। অথচ মহানগর কমিটিতে সদস্য ১০১ জন। এখানে এসেছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আজকে যদি দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির কোনো নেতা আসতেন তাহলে রাস্তা পর্যন্ত ভিড় থাকত।’ তিনি বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে দেখতে বলেন।

আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য শেষ হলে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দিতে আসেন। ডায়াসে এসে তিনি ফেসবুকে লাইভ বন্ধ করার অনুরোধ জানান আরিফুল হকের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার জন্য। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখানে হলভর্তি নেতাকর্মী রয়েছেন। উপচেপড়া ভিড় হয়েছে। এরপরও কেন তিনি (আরিফুল হক) জ্যেষ্ঠ নেতারা নেই বলে অভিযোগ করছেন। এরপর তিনি ৫ আগস্টের আগে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর ভূমিকা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক বিএনপি নেতা জানান, কয়েস লোদী যখন ৫ আগস্টের আগে নেতাকর্মীদের ভূমিকা, পঙ্গুত্ববরণ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তখন আরিফুল হক চেয়ার ছেড়ে উঠে কয়েস লোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- শোনো, আমি যে বক্তব্য বলেছি সেই বক্তব্যের আলোকে কথা বলো।

উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলেন, বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা চলে। এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে বাকবিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যার কারণে বিএনপি দলটির জন্ম হয়েছে, আমরা এখানে আছি সেই প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মহানগর কমিটির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা উপস্থিত নেই। ২০ জন সহ-সভাপতি, ১৫ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির কত জন উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে? প্রথম সারির নেতারা যদি দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে না আসেন- এর চেয়ে দুঃখজনক কি হতে পারে। আমার খারাপ লেগেছে। আমি বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আমি তো নেতিবাচক কিছু বলিনি। তিনিই বা এরকম আচরণ কেন করলেন তাও আমার বোধগম্য নয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। সভায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, শাবিপ্রবির সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক শামীমুর রহমানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

সিলেটে আলোচনা সভায় মঞ্চেই বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন বিএনপির দুই নেতা

প্রকাশের সময় : ১০:৩১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

সিলেট জেলা প্রতিনিধি : 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় নগরের দরগা গেট এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সুলেমান হলে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক একাধিকবারের মেয়র।

রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সিসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিকবারের কাউন্সিলর। তিনি সিসিকের সাবেক প্যানেল মেয়রও ছিলেন। কয়েস লোদী সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, আলোচনা অনুষ্ঠানে আরিফুল হক চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আরিফুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ করলে কয়েস লোদী সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দিতে আসেন। কয়েস লোদীর বক্তব্য চলার সময় এই বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর বিএনপির কমিটির বেশিরভাগ সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ প্রথম সারির নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসসেন চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে মানুষটির জন্য এ দল সৃষ্টি হয়েছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

তার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আজকে মহানগর বিএনপির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতাকে এখানে আমরা দেখছি না। অথচ মহানগর কমিটিতে সদস্য ১০১ জন। এখানে এসেছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আজকে যদি দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির কোনো নেতা আসতেন তাহলে রাস্তা পর্যন্ত ভিড় থাকত।’ তিনি বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে দেখতে বলেন।

আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য শেষ হলে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সভাপতির সমাপনী বক্তব্য দিতে আসেন। ডায়াসে এসে তিনি ফেসবুকে লাইভ বন্ধ করার অনুরোধ জানান আরিফুল হকের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার জন্য। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখানে হলভর্তি নেতাকর্মী রয়েছেন। উপচেপড়া ভিড় হয়েছে। এরপরও কেন তিনি (আরিফুল হক) জ্যেষ্ঠ নেতারা নেই বলে অভিযোগ করছেন। এরপর তিনি ৫ আগস্টের আগে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর ভূমিকা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক বিএনপি নেতা জানান, কয়েস লোদী যখন ৫ আগস্টের আগে নেতাকর্মীদের ভূমিকা, পঙ্গুত্ববরণ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তখন আরিফুল হক চেয়ার ছেড়ে উঠে কয়েস লোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- শোনো, আমি যে বক্তব্য বলেছি সেই বক্তব্যের আলোকে কথা বলো।

উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলেন, বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা চলে। এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে বাকবিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যার কারণে বিএনপি দলটির জন্ম হয়েছে, আমরা এখানে আছি সেই প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মহানগর কমিটির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা উপস্থিত নেই। ২০ জন সহ-সভাপতি, ১৫ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির কত জন উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে? প্রথম সারির নেতারা যদি দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে না আসেন- এর চেয়ে দুঃখজনক কি হতে পারে। আমার খারাপ লেগেছে। আমি বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আমি তো নেতিবাচক কিছু বলিনি। তিনিই বা এরকম আচরণ কেন করলেন তাও আমার বোধগম্য নয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। সভায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, শাবিপ্রবির সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক শামীমুর রহমানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।