স্পোর্টস ডেস্ক :
বিসিবি সভাপতির পদে ফারুক আহমেদের অবস্থান টালমাটাল, এমন গুঞ্জন দেশের ক্রিকেটে ভেসে বেড়াচ্ছিল কয়েক দিন থেকেই। সেটিই এবার প্রকাশ্য হতে শুরু করেছে। বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে পরিবর্তন চান বলে ফারুক আহমেদকে জানিয়ে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে বিসিবি সভাপতি জানালেন, তিনি এখনও কিছু ভাবেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সময়ের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পরে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন দেশের বাইরে থেকে। গত ২১ অগাস্ট যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ।
তবে বুধবার (২৮ মে) রাতে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। আলোচনার বিস্তারিত বলতে চাইলেন না ফারুক। তবে তিনি জানালেন সারসংক্ষেপ।
তিনি বলেন, উপদেষ্ট বলেছেন, বোর্ডের শীর্ষ পদে তিনি পরিবর্তন চান। আমি এখনও কিছু ভাবিনি। মাত্রই গতকাল রাতের ব্যাপারৃ কিছুটা সময় নিতে চাই।
ফারুক আহমেদের ‘ভাবনা’ মানে পদত্যাগ করা। নিয়ম মানলে আপাতত এটা ছাড়া বোর্ড সভাপতি বদলের কোনো সুযোগ নেই। কারণ বোর্ড পরিচালক হয়ে এরপর অন্য পরিচালকদের ভেটে গঠনতন্ত্র মেনেই সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। সরকার বা সরকারী কোনো কর্তৃপক্ষ তাকে সরিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। বরং সরকারর হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসতে পারে বাংলাদেশের ওপর। অতীত শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে এমন নজির আছে। ফারুক নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে তাই মন্ত্রণালয়ের কিছু করার সুযোগ সামান্যই।
এই মুহূর্তে অবশ্য বড় প্রশ্ন পরিবর্তন চাওয়ার পেছনের কারণ নিয়ে। প্রধান নির্বাচক হিসেবে দই দফায় বিসিবির অধীনে চাকরি করেছেন ফারুক। ২০১৬ সালে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর বোর্ডের ধারেকাছে ছিলেন না তিনি। ব্যস্ত ছিলেন মূলত ব্যবসা নিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফারুকের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে সরাসরি পরিচালক করে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ৯ মাস পরই কেন চিত্র এতটা বদলে গেল, এটা নিয়েই এখন কৌতূহল।
ফারুকের বিরুদ্ধে অবশ্য অনিয়মসহ কিছু অভিযোগ উঠেছে গত কিছুদিনে। গত বিপিএলে নানা অব্যবস্থাপনা নিয়েও তুমুল বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাকে। সেসময়ও একবার গুঞ্জন উঠেছিল, কোনো প্রক্রিয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে বিপিএলে এবার মাঠ থেকে মাঠে দারুণ দর্শক উপস্থিতি ও টিকেট বিক্রির আয়ে রেকর্ড গড়েও আবার প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।
আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। কয়েক মাস ধরেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতিসহ সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ফারুক। এর মধ্যেই তার জন্য ধাক্কা হয়ে এলো উপদেষ্টার চাওয়া।
পদত্যাগ না করলে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে তিনি দায়িত্ব কতটা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারবেন, সেটিও এখন প্রশ্ন। শনিবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের একটি পূর্ব নির্ধারিত সভা আছে। সেটিই এখন রূপ নিয়েছে মহাগুরুত্বপূর্ণ এক সভায়। ফারুক যদিও তেমন কিছু বলতে চাইলেন না সভা নিয়ে, “এই সভায় আলোচনার অনেক বিষয়ই আছে। আমার ব্যাপারটি এখানে মুখ্য নয়।”
শেষ পর্যন্ত ফারুক আহমেদ পদত্যাগ করলে তার জায়গায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়েন পরিচালক হবেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তাকে পরিচালক হওয়ার প্রস্তাব বেশ কদিন আগেই দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
আর পরিচালক হওয়া মানে যে বোর্ড সভাপতি হওয়ার দিকেও এগিয়ে যাওয়া, সেটিও পরিষ্কার। যদিও আমিনুল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নিলে সেটি স্রেফ আগামী বিসিবি নির্বাচন পর্যন্তই হবে। দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব নেওয়া বা বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে তার নেই।
নতুন খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিসিবি সভাপতি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য অবশ্য বেশকিছু ধাপ পেরুতে হবে তাকে। প্রাথমিকভাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে কাউন্সিলর হতে হবে বুলবুলকে। কাউন্সিলর হওয়ার পর আবার পরিচালক মনোনীত হবে। এরপর পরিচালকদের মধ্যে থেকে সভাপতি নির্বাচিত হবে।
উল্লেখ্য, আমিনুল ইসলাম বুলবুল আইসিসিতে চাকরি করায় তিনি বিসিবির নির্বাচনে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না। ফলে তাকে বিসিবিতে আনতে হলে কাউন্সিলর পরিচালক সবই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে করতে হবে। ফারুক জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হিসেবে কাউন্সিলর থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাকে পরিচালক মনোনীত করেছে। এরপর পরিচালকরা সভাপতি নির্বাচিত করেছে।
এটা সরকারের হস্তক্ষেপ হলেও বিসিবির গঠনতন্ত্রে অনুমোদিত এবং সেটা আইসিসি থেকেও স্বীকৃত এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সেই অর্থে তেমন সুযোগ নেই।
তবে নতুন একটি আলোচনা হতে পারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এক মেয়াদে কতবার পরিচালক পরিবর্তন করতে পারে। ফারুকের পরিবর্তে বুলবুল আসলে সেক্ষেত্রে হবে তৃতীয় প্রয়োগ। প্রথমে সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস ছিলেন এনএসসি পরিচালক এরপর হলেন ফারুক ও ফাহিম। এখন ফারুকের বদলে বুলবুল আসলে তৃতীয় রদবদল এই কোটায়। গঠনতন্ত্রে অবশ্য এ নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু নেই।
আগামী ৩১ মে শনিবার বিসিবির বোর্ড মিটিং রয়েছে। সেখানে সভাপতি ইস্যুতে বিস্তারিত আভাস মিলতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছেন বুলবুল। পারিবারিক জমি সংক্রান্ত এক কাজে দিন কয়েক আগেই ঢাকা আসেন তিনি। কাজ শেষ করে আগামী ২ জুন দেশ ছাড়বেন বুলবুল এমনটি জানা গিয়েছে।