চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম কোনো দলের নয়, তারা এই সরকারে গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
রোববার (২৫ মে) সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকায় দলের এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এই পথসভার আয়োজন করে।
হাসনাত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার যে অপচেষ্টা চলছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই দুই উপদেষ্টা কোনো নির্দিষ্ট দলের নয় বরং চলমান গণঅভ্যুত্থানের সার্বজনীন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের (আসিফ-মাহফুজ) দলীয় পরিচয়ে ট্যাগ করার প্রচেষ্টাকে আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাই। তারা এনসিপি বা অন্য কোনো দলের প্রতিনিধি নন, তারা এই সরকারে জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তিনি বলেন, যখনই জাতীয় সংকট এসেছে, দেশি-বিদেশি বা অভ্যন্তরীণ দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রের চেষ্টা হয়েছে, আমরা গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করেছি। জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট আমাদের লড়াই-সংগ্রাম শেষ হয়েছে। কিন্তু একটা পক্ষ সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, ষড়যন্ত্র করছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ছোট ছোট মতপার্থক্য দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকারকে বিচার কার্যক্রম, সংস্কার কার্যক্রম ও নির্বাচনী রোডম্যাপ সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে। আমরা মুজিববাদী সংবিধান চাই না। এটি সংস্কার করে অবিলম্বে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়, এমন সংবিধান বাস্তবায়ন চাই। সাম্য ও ন্যায্যতার বাংলাদেশ চাই, যেখানে নাগরিকের কাছে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা থাকবে।
অসাম্প্রদায়িক নাম দিয়ে ধর্মহীনতার বাংলাদেশ পরিচালনার চেষ্টা করা হয়েছে বলে পথসভায় মন্তব্য করেন এনসিপির এ নেতা। তিনি বলেন, আমরা চাই পরিবর্তিত বাংলাদেশ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। আর এখানে সবাই বসবাস করব।
বাংলাদেশের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর ওপর অনেকে বিরক্ত, কিন্তু পুলিশকে কারা ব্যবহার করেছে, সেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। পুলিশের প্রমোশন নিয়ে কেউ কথা বলে না, পুলিশের সংস্কার নিয়ে কেউ কথা বলে না। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গড়ব, যেখানে পুলিশকে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। প্রশাসনকে জনতার কাতারে নেমে এসে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে।
এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে শহীদ আর আহতদের রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। পরবর্তী বাংলাদেশটা অবশ্যই জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের, যে বাংলাদেশে রাতে কোনো নির্বাচন হবে না, কোনো ডামি নির্বাচন হবে না। দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। ইউএনও-পুলিশ দিয়ে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই বাংলাদেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। জনতা এখন ক্ষমতাবান হয়েছে। কথা বলতে মানুষের এখন আর ভয় লাগে না। আমরা আপনাদের সন্তানের মতো, আমরা যদি কোনো ভুল করে থাকি, আপনারা আমাদের সংশোধন করে দেবেন। এনসিপির নেতৃত্বে আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলব; যে বাংলাদেশে জনগণই হবে ক্ষমতার উৎস।’
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মাহমুদা আলম, মো. আতাউল্লাহ; সংগঠক আরমান হোসেন, আজিজুর রহমান ও কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়ের আলম প্রমুখ। পথসভা শেষে মইজ্জারটেক এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারে লিফলেট বিতরণ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি এ সময় বলেন, নতুন বাংলাদেশে একসঙ্গে দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কেউ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবেন না।