খুলনা জেলা প্রতিনিধি :
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে ঘেরাও করা লাগলে, তা হবে দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট স্বচ্ছ নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
শনিবার (১৭ মে) খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আপনাকে ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন করার জন্য। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয়নি। জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আপনি আশ্বস্ত করেও সে কথা রাখেননি।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে অপহরণ, গুম এবং সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করেছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকারসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। লুটপাট করে ব্যাংকিং খাতও ধ্বংস করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১৪ ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যারা ভোটার হয়েছেন ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেননি। এভাবে হওয়া তিনটি নির্বাচনে পাঁচ কোটি যুবক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে সংগঠিত হয়েছে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আর রক্ত দিতে হবে না, মিছিল করতে হবে না এ প্রত্যাশা সবার।”
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মাধ্যমে একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দাবিগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ দেশের তরুণরাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, কিন্তু মনে করবেন না, কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো। আপনার সরকারকে লোকজন বলছে, এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুইজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা এবং এনসিপি সংগঠন করে। আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, এনসিপি মার্কা দুইজনকে পদত্যাগ করতে বলুন। পদত্যাগ না করলে আপনি বিদায় করুন।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কী সেই আক্কেল জ্ঞান নাই। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে কীভাবে ভাবলেন। তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ–আলোচনা করেননি। অত্যন্ত অ্যারোগেন্টলি আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন তাতে নাকি কিছু যায় আসে না। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। হয় তিনি নিজে পদত্যাগ করবে, না হলে আপনি তাঁকে বিদায় করবেন। এ দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি কোনো নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। আমরা তা হতে দেব না।’
আওয়ামী লীগ দেশে খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ মেরেছে, তারপরেও তিনি (শেখ হাসিনা) অনুতপ্ত হননি, ক্ষমা চাননি। উল্টো দিল্লিতে বসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস জন্মলগ্ন থেকেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। এই দেশের সাংবিধানিকভাবে গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। বাকশাল প্রণয়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের রাজনীতিকে হত্যা করার ইতিহাস। এ দেশে আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্ষী বাহিনী সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যার ইতিহাস। এমনিভাবে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালে গণহত্যার মধ্য দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ঢাকার মাটিতে। দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। এই অত্যাচার-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। রাজনৈতিকভাবে তারা তাদের নিজেদের অপসারণ নিজেরাই করেছে এবং রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে এবং এ দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই দেশে বন্দর, করিডর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, করিডর সব বিদেশিদের কাছেন হস্তান্তর করবেন—কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন। আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট বাংলাদেশে একটা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সুন্দর, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমরা বলছিলাম, যথেষ্ট হয়েছে, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার, সেসব জরুরি সংস্কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন আবার আপনি সরে গেলেন।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম (মুন্না)। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম (নয়ন)। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।