নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করে দেওয়া রায় দিয়েছেন আদালত। যারা এই রায়ের সমালোচনা করছেন তারা আদালত অবমাননা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ইশরাক বলেন, নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করা হয়েছিল। তাপস প্রভাব খাটিয়ে এই মামলা থামানোর চেষ্টা করেন। তখন আদালত আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সব আইনি পদক্ষেপ মেনে আমরা রায় পেয়েছি। কাজেই আদালতের এই রায় বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন তারা আদালত অবমাননা করছেন।
তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা বলেছেন, তাদের মতামত না নিয়েই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও তার মতামতের জন্য ফাইল টেবিলে পড়েছিল। কিন্তু ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নিয়ম মেনেই গেজেট প্রকাশ করা হয়।
গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পার হলেও তাকে শপথ করানো হয়নি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা শপথ গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশ হওয়ার পরও বর্তমান সরকার মানে স্থানীয় সরকার বিভাগ আমাকে শপথ পড়ানোর জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। নির্বাচন কমিশনের উপর এরই মধ্যে সরকার এক ধরনের হস্তক্ষেপ দেওয়া শুরু করেছে। এই সরকারের অধীনে একটি সুন্দর নির্বাচন হতে পারে কিনা কোন সন্দেহ নয় স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি। সরকারের মধ্যে এখন সরকার রয়েছে যারা একটি দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য কাজ করছে।
ইশরাক হোসেন বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। এই মামলাটি ছিল নৌকার প্রার্থীর শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধেৃ তাদের পক্ষ হয়ে এখন কারা এই মামলায় বাধাদান করতে পারে? তাহলে তারা সেই দোসরদেরই লোক হয়ে গেলো তাই না। আমি দোষ দেবো ওই দোসরদেরকে, আমি অন্য কাউকে দোষ দেবো না।
তিনি আরও বলেন, আমি সকল পক্ষ যারা এখানে রেসপন্সিবল পার্টি রয়েছেন সবাইকে আহ্বান বলব, যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপনারা আদালতের রায় কার্যকর করুন, রায়টি বাস্তবায়ন করুন…।
গত তিনদিন যাবত ঢাকা দক্ষিণ নগরভবন ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইশরাক সমর্থক নেতা-কর্মীরা। শনিবার ‘ঢাকার সাধারণ ভোটার’ ব্যানারে নগর ভবনের সামনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান ও সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি পালন করে সহস্রাধিক মানুষ। তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নগর ভবনে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। নগর ভবনের তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
এ রকম প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আমি এই আন্দোলনের ঘোষণা দেই নাই, আদেশ-নির্দেশনা কিছুই দেই নাই। সেক্ষেত্রে আমি তাদেরকে (আন্দোলনকারীদের) অবশ্যই আমি বলবো, তারা যাতে এমন কিছু না করে যেটাতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি আমি তাদের আন্দোলন করার অধিকারকে আমি না বলতে পারি না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কেউ যদি আন্দোলন করে আমি তাদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার রাখি না।
শপথ গ্রহণের বিলম্বে কোনো রাজনৈতিক দলকে দোষী করছেন কিনা? প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো এক ব্যক্তি বা সরকারকে দোষারোপ করছি না। আমরা এটা সমাধান চাচ্ছি… এটাই।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সাথে আপনার কোনো বিরোধ আছে কি না? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বা অন্য কোনো উপদেষ্টার আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধও নাই, ব্যক্তিগত সম্পর্কও নাই। তাদের (উপদেষ্টাদের) ৯৯ শতাংশের সঙ্গে আমরা কোনোদিনই দেখাও হয়নি, পরিচয়ও নাই। সে জন্য এই প্রশ্নটি একেবারেই অবান্তর।
আদালতের রায়ের বিস্তারিত তুলে ধরে ইশরাক বলেন, গ্যাজেট প্রকাশের ২০ দিন হয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত আমাকে শপথ গ্রহণ করানোর জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নেয় নাই যেটি কিনা এখতিয়ারে পড়েৃ বর্তমান সরকার বলতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে বোঝানো হচ্ছে যেখানে নির্বাচন কমিশন থেকে এই নির্দেশনাটি গ্যাজেটসহ স্থানীয় সরকার বিভাগে অর্থাৎ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়। পাঠানোর পর তারা আরেকটি যে কাজ করে সেটিকে আইনের দৃষ্টিতে অনেকেই বলেছে এটি বেআইনি সেটি হলো তারা পাল্টা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে লিখে সেখানে একাধিক একটা রেফার দিয়ে বলার চেষ্টা করে যে এখানে আপিল করবে কি না।
তিনি আরও বলেন, অথচ নির্বাচন কমিশন কিন্তু তার যে আইনজীবী প্যানেল রয়েছে তার যে বিজ্ঞ আইনজীবীরা রয়েছেন এবং তার যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেটি সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিশন মিলেই কিন্তু সিদ্ধান্ত দিয়ে গ্যাজেট প্রকাশ করে ফেলেছে। অতএব এখানে একটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কি নির্বাচন কমিশনকে অলমোস্ট নির্দেশনা দিতে পারে কিনা সেই বিষয়টি এখন প্রশ্ন হিসেবে চলে এসেছে। সো এখানে আমরা দেখছি যে নির্বাচন কমিশনের উপর ইতিমধ্যেই এই সরকার এক ধরনের হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় উঠছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপরে এ রকম হস্তক্ষেপ হলে সেটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সেটা নিয়ে জনগণ এখন শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এদের এই বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে এই উপদেষ্টা পরিষদের অধীনে একটি সঠিক সুস্থ নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে কিনা সেটা নিয়ে জনমনে এখন শুধু সন্দেহ না, তারা এখন স্পষ্টতই দেখতে পারছে এটি সম্ভব নয়।
এর আগে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইশরাক হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আন্দোলনের মধ্যেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তিনি।
ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে চলমান সংকট প্রসঙ্গে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন ইশরাক হোসেন।
এ দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। এতে নগর ভবনের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ইশরাক হোসনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।