Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি পক্ষ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে : নজরুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটি দেশে সামিজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে। রাজনৈতিক সরকারের সেটি মোকাবেলা ও সমাধানের জন্য কোনো বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি বোঝে।

শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, পরিপূর্ণ সংস্কারের পক্ষে বিএনপি। তবে একবারে শেষ করার বিষয় নয় সংস্কার। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এটি হবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। ঐকমত্যে যদি আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে বাঁধা কোথায়? কাউকে সুযোগ দিতেই এ সময় নির্বাচন পেছানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মানুষ। অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো এক দফার দাবি জানিয়ে আসছিল। বিএনপির দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলাফল এই গণঅভ্যুত্থান।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, কারও দল গোছানোর জন্য সময় দরকার, কারও বন্ধু জোগাড় করার জন্য সময় দরকার। কিন্তু তার জন্য জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে, এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে গত আগস্টে ঘোষিত এক দফার একটি পর্যায় এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অনেক তরুণ আছেন, যাদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন অনেকদিন আগে। আজ পর্যন্ত তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তারা সে অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে চায়। এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকার অর্জনের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারারুদ্ধ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, আমরা বলেছি, লেবার পার্টি বলেছে, যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। আমি এখানে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে প্রশ্ন রাখতে চাই, যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা শুধু বলুন, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অসুবিধাই থাকার কথা নয়। অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো ১৯৭৬-৭৭ সালেই ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ২০৩০ ভিশন দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটি সমৃদ্ধ করে, আন্দোলনে যুক্ত সবার অংশগ্রহণে ২০২৩ সালে আমরা ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি ঘোষণা করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে, কিন্তু এরচেয়ে ভালো পদ্ধতি আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমাদের এ পথেই এগোতে হবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের সাথীরা, যারা জীবন দিয়েছেন, তারা এ গণতন্ত্রের জন্যই জীবন দিয়েছেন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য জীবন দিয়েছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের সামনে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হবে। আর যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, অবহেলা করবে, তাদের প্রতিস্থাপনের ক্ষমতাও থাকবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই। আমরা সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই যুক্ত হতে চাই।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি পক্ষ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে : নজরুল ইসলাম খান

প্রকাশের সময় : ০৩:১৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটি দেশে সামিজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে। রাজনৈতিক সরকারের সেটি মোকাবেলা ও সমাধানের জন্য কোনো বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি বোঝে।

শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, পরিপূর্ণ সংস্কারের পক্ষে বিএনপি। তবে একবারে শেষ করার বিষয় নয় সংস্কার। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এটি হবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। ঐকমত্যে যদি আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে বাঁধা কোথায়? কাউকে সুযোগ দিতেই এ সময় নির্বাচন পেছানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মানুষ। অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো এক দফার দাবি জানিয়ে আসছিল। বিএনপির দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলাফল এই গণঅভ্যুত্থান।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, কারও দল গোছানোর জন্য সময় দরকার, কারও বন্ধু জোগাড় করার জন্য সময় দরকার। কিন্তু তার জন্য জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে, এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে গত আগস্টে ঘোষিত এক দফার একটি পর্যায় এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অনেক তরুণ আছেন, যাদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন অনেকদিন আগে। আজ পর্যন্ত তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তারা সে অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে চায়। এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকার অর্জনের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারারুদ্ধ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, আমরা বলেছি, লেবার পার্টি বলেছে, যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। আমি এখানে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে প্রশ্ন রাখতে চাই, যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা শুধু বলুন, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অসুবিধাই থাকার কথা নয়। অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো ১৯৭৬-৭৭ সালেই ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ২০৩০ ভিশন দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটি সমৃদ্ধ করে, আন্দোলনে যুক্ত সবার অংশগ্রহণে ২০২৩ সালে আমরা ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি ঘোষণা করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে, কিন্তু এরচেয়ে ভালো পদ্ধতি আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমাদের এ পথেই এগোতে হবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের সাথীরা, যারা জীবন দিয়েছেন, তারা এ গণতন্ত্রের জন্যই জীবন দিয়েছেন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য জীবন দিয়েছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের সামনে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হবে। আর যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, অবহেলা করবে, তাদের প্রতিস্থাপনের ক্ষমতাও থাকবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই। আমরা সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই যুক্ত হতে চাই।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।