Dhaka শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই : ফরহাদ মজহার

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি : 

কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর প্রদানের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে এবং দেশকে আরেকটি প্রক্সি যুদ্ধে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।’

শুক্রবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আরেকটি প্রক্সিওয়ারে জড়াতে চাইছে। আমি চাই না বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক।

অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন রাখাইনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তবে বুঝতে হবে, এতে আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষের একজন মানুষ হিসেবে বলব যে, এই ধরনের করিডোর দেওয়া উচিত নয়। আপনি (অন্তবর্তীকালীন সরকার) যদি মনে করেন যে, রাখাইনের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আমাদেরকে ব্যবহার করতে চাইছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে চাইছে, আরেকটি প্রক্সি ওয়ারে জড়াবে। আমি চাই না বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এ ধরনের প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়ে যাক।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আবারও নির্বাচিত সরকার হিসেবে দাবি করে ফরহাদ মজহার বলেন, এই সরকারকে উৎখাত করার জন্য নির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য ক্রমাগতভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই সরকারের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

তিনি সংস্কার কমিশন গঠনের সমালোচনা করে বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জনগণের অভিপ্রায় বুঝতে হবে।

তিনি সরকারকে জনগণের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জনগণের অভিপ্রায় বুঝতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। আমরা আশা করেছিলাম যে, গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে সরকার কায়েম করেছি। আমরা আশা করেছিলাম যে, এই সরকার জনগণের কাছে যাবে। কিন্তু তারা এটা করলেন না। তারা ওপর থেকে অনেকগুলো কমিশন বসিয়ে দিলেন। কমিশনগুলো ঢাকা শহরে বসে বসে আলোচনা করলেন। তারা জনগণকে ডাকেনি, তাদের কথা শোনেনি। যদি জনগণকেই আমরা অস্বীকার করি তাহলে কি করে আমরা সত্যিকার অর্থে নতুন যে বাংলাদেশ বানাতে চাই, সেটা কি করে সম্ভব?

ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের আমূল সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা যাবে না। যে নির্বাচন প্রক্রিয়া এখনো দেশে বিদ্যামান রয়েছে সেটি শেখ হাসিনার। এই ফ্যাসিস্টের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাতিল করেই তো নির্বাচনে যেতে হবে। রাষ্ট্র গঠন এবং নির্বাচন দুটি দুই বিষয়।

ফরহাদ মাজহার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর প্রত্যেক তরুণকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল। একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা আমাদের প্রথম কাজ ছিল। বাংলাদেশকে রক্ষা করা আমাদের সবার কাজ। আগে দেশকে নিয়ে ভাবেন। আপাতত নির্বাচন বাদ দিন। প্রথমে দেশ গঠন, তারপর নির্বাচন নিয়ে ভাবুন।”

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। জনগণের অধিকার অগ্রাধিকার দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, নতুন গঠনতন্ত্র করে নির্বাচন হোক। শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো সজাগ আছে। আমাদেরও সজাগ থাকতে হবে বাংলাদেশের জন্য।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ মজহার বলেন, কিছু বিষয় নিয়ে জনগণকে আগামীতে সচেতন করতে হবে। আমরা যে নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, সেখানে কোনো ব্যক্তির অধিকার বা মর্যাদা হরণ করা যাবে না। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কথা বলিনি, জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা বলেছি। রাষ্ট্রের এমন কোনো অধিকার নেই, যখন তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে।

ফরহাদ মজদার সংসদ নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলেন, যারা আইন বোঝে রাজনীতি বোঝে কিন্তু দল বোঝে না তাদেরকে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনে পাঠাব। তারা বসে খসড়া গঠনতন্ত্রের বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ একটি খসড়া গঠনতন্ত্র পাশ করবে। তারপর গণভোট হবে। জনগণ তাতে সম্মতি দিলে তা নতুন গঠনতন্ত্র হিসেবে চূড়ান্ত হবে। সেই নতুন গঠনতন্ত্রের অধীনে নতুন সরকার গঠনের নির্বাচন হবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নদী গবেষক মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, কবি ও সংগঠক মো. রুমেল, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, বাংলাভিশন বগুড়া ব্যুরো প্রধান ও গবেষক সাংবাদিক আব্দুর রহীম, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গনেশ দাশ, রেজাউল বারী দিপন, কবি তালাশ তালুকদার, আব্দুর রশীদ প্রবালসহ জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই : ফরহাদ মজহার

প্রকাশের সময় : ০৯:৪০:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি : 

কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর প্রদানের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে এবং দেশকে আরেকটি প্রক্সি যুদ্ধে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।’

শুক্রবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আরেকটি প্রক্সিওয়ারে জড়াতে চাইছে। আমি চাই না বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক।

অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন রাখাইনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তবে বুঝতে হবে, এতে আমাদের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষের একজন মানুষ হিসেবে বলব যে, এই ধরনের করিডোর দেওয়া উচিত নয়। আপনি (অন্তবর্তীকালীন সরকার) যদি মনে করেন যে, রাখাইনের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আমাদেরকে ব্যবহার করতে চাইছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে চাইছে, আরেকটি প্রক্সি ওয়ারে জড়াবে। আমি চাই না বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এ ধরনের প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়ে যাক।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আবারও নির্বাচিত সরকার হিসেবে দাবি করে ফরহাদ মজহার বলেন, এই সরকারকে উৎখাত করার জন্য নির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য ক্রমাগতভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই সরকারের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

তিনি সংস্কার কমিশন গঠনের সমালোচনা করে বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জনগণের অভিপ্রায় বুঝতে হবে।

তিনি সরকারকে জনগণের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জনগণের অভিপ্রায় বুঝতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। আমরা আশা করেছিলাম যে, গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে সরকার কায়েম করেছি। আমরা আশা করেছিলাম যে, এই সরকার জনগণের কাছে যাবে। কিন্তু তারা এটা করলেন না। তারা ওপর থেকে অনেকগুলো কমিশন বসিয়ে দিলেন। কমিশনগুলো ঢাকা শহরে বসে বসে আলোচনা করলেন। তারা জনগণকে ডাকেনি, তাদের কথা শোনেনি। যদি জনগণকেই আমরা অস্বীকার করি তাহলে কি করে আমরা সত্যিকার অর্থে নতুন যে বাংলাদেশ বানাতে চাই, সেটা কি করে সম্ভব?

ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের আমূল সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা যাবে না। যে নির্বাচন প্রক্রিয়া এখনো দেশে বিদ্যামান রয়েছে সেটি শেখ হাসিনার। এই ফ্যাসিস্টের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাতিল করেই তো নির্বাচনে যেতে হবে। রাষ্ট্র গঠন এবং নির্বাচন দুটি দুই বিষয়।

ফরহাদ মাজহার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর প্রত্যেক তরুণকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল। একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা আমাদের প্রথম কাজ ছিল। বাংলাদেশকে রক্ষা করা আমাদের সবার কাজ। আগে দেশকে নিয়ে ভাবেন। আপাতত নির্বাচন বাদ দিন। প্রথমে দেশ গঠন, তারপর নির্বাচন নিয়ে ভাবুন।”

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। জনগণের অধিকার অগ্রাধিকার দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, নতুন গঠনতন্ত্র করে নির্বাচন হোক। শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো সজাগ আছে। আমাদেরও সজাগ থাকতে হবে বাংলাদেশের জন্য।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ মজহার বলেন, কিছু বিষয় নিয়ে জনগণকে আগামীতে সচেতন করতে হবে। আমরা যে নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, সেখানে কোনো ব্যক্তির অধিকার বা মর্যাদা হরণ করা যাবে না। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কথা বলিনি, জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা বলেছি। রাষ্ট্রের এমন কোনো অধিকার নেই, যখন তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে।

ফরহাদ মজদার সংসদ নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলেন, যারা আইন বোঝে রাজনীতি বোঝে কিন্তু দল বোঝে না তাদেরকে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনে পাঠাব। তারা বসে খসড়া গঠনতন্ত্রের বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ একটি খসড়া গঠনতন্ত্র পাশ করবে। তারপর গণভোট হবে। জনগণ তাতে সম্মতি দিলে তা নতুন গঠনতন্ত্র হিসেবে চূড়ান্ত হবে। সেই নতুন গঠনতন্ত্রের অধীনে নতুন সরকার গঠনের নির্বাচন হবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নদী গবেষক মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, কবি ও সংগঠক মো. রুমেল, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, বাংলাভিশন বগুড়া ব্যুরো প্রধান ও গবেষক সাংবাদিক আব্দুর রহীম, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গনেশ দাশ, রেজাউল বারী দিপন, কবি তালাশ তালুকদার, আব্দুর রশীদ প্রবালসহ জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।