সাভার উপজেলা প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে চেয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার তাতে বাধা দেয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে সাভারে রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৩-২৪ স্মরণ ও সংস্কারে শ্রমিকের বন্দোবস্ত কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যে দুর্বৃত্তায়ন করেছিল, রানা প্লাজার মধ্য দিয়ে তা যেন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ না পায় এবং সে জন্য তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এখানে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়নি।
এনসিপির সদস্যসচিব আরও বলেন, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল, ন্যূনতম ন্যায্য মজুরি ও কর্মস্থলের পরিবেশ যেন শ্রমিকদের অনুকূলে থাকে–বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে এনসিপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই, সরকারিভাবে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দিবসকে জাতীয় শ্রমিক দিবস ঘোষণা করতে হবে। দিনটিতে পোশাক কারখানাসহ যতগুলো শ্রমিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে।
আখতার হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, আহত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের দাবি জানাই। রানা প্লাজার অনুদানের টাকা কেউ আত্মসাৎ করে থাকলে আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাঁদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’ শ্রমিকদের অনুদানের টাকা শ্রমিকদের মাঝে ন্যায্যভাবে বণ্টন করাসহ রানা প্লাজার ঘটনার মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে আখতার হোসেন বলেন, এই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা তাঁর রাজনৈতিক দাপটে একটি পিলারে ভাঙনের পরেও গায়ের জোরে গার্মেন্টস খোলা রাখার হুকুম দিয়েছিলেন। তাঁর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা। আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর রাজনীতিকে এমনভাবে দুর্বৃত্তায়ন করেছিল, সেই ফাঁদে পড়ে শ্রমিকদের রানা প্লাজায় জীবন দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের কর্মস্থলে দুর্বল করে রাখে, তাদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ দেয় না, কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় পদ-পদবী এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জায়গায় যেন তাদের দেওয়া না হয়।
আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি বাংলাদেশে নতুন করে রাজনীতির বন্দোবস্ত নির্মাণ করতে চায়। শ্রমিকদের হিস্যা ন্যায্যভাবে আদায় করার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি সবসময় তাদের পাশে থেকে কাজ করে যাবে।
তিনি বলেন, এনসিপি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য তাদের স্বার্থে শ্রমিক উইং গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে আমরা সমন্বয়ক একটি কমিটি করেছি। আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে দেশের শ্রমিক জনতার পক্ষে কথা বলার জন্য, তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করার জন্য অবশ্যই জাতীয় নাগরিক পার্টির শ্রমিক উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন।
আখতার হোসেন বলেন, ২৪ এপ্রিল জাতীয় শ্রমিক দিবসে সব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ যতগুলো শ্রমিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে কোথায় কোথায় বিগত ১ বছরে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিক পরিবেশ রয়েছে, কর্মস্থল রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কোনগুলোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেই তালিকা পরিষ্কার করতে হবে।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, রানা প্লাজার ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন, সেই শহীদ পরিবার এবং যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন সেই সব শ্রমিকদের অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক উইংয়ে প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম ফকির, শ্রমিক উইংয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা।