নিজস্ব প্রতিবেদক :
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২৬৩ বিডিআর সদস্যের জামিন শুনানি আবারো পেছানো হয়েছে। জামিন শুনানির জন্য আগামী ৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে শুনানি ও মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে এদিন বিচারক অসুস্থ থাকায় কোনো শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়নি।
তাই সংশ্লিষ্ট কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারক শেখ তারিক এজাজ শুনানির জন্য আগামী ৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন। তিনি বলেন, আজ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় সাক্ষী ও ২৬৩ বিডিআর সদস্যের জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী তারিখের মতো আজও বিচারক অসুস্থ থাকায় শুনানি পেছানো হয়েছে। বারবার বিচারকের অসুস্থতার কথা বলে শুনানি পেছানোয় জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ১৭৮ বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল না থাকায় একই আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের বিচারক ইব্রাহিম মিয়া অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এজন্য মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জামিনের বিষয়ে কোনো আদেশ হয়নি। এ নিয়ে চারবার জামিনের বিষয়ে আদেশের তারিখ পেছাল। এর আগে গত ১৩ মার্চ আসামিদের জামিনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত ১৬ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন। তবে ওইদিন আদেশ পিছিয়ে ১৭ মার্চ ফের আদেশের জন্য রাখা হয়। পরে ওইদিন আদেশ না দিয়ে ১০ এপ্রিল তারিখ ধার্য করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।
অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। ২০১০ সালে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজও শুরু হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।