Dhaka শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাঠিপেটা না করে ছত্রভঙ্গ, রাষ্ট্রপতি পদক পাচ্ছেন সেই পুলিশ কনস্টেবল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সচিবালয়ের সামনে ছিল উত্তেজনার ঢেউ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারির সেই দুপুরে শহরের কোলাহল ছাপিয়ে আন্দোলনের স্লোগান ছড়িয়ে পড়ছিল বাতাসে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন দাঁড়িয়ে ছিলেন নিজের কর্তব্যবোধকে ধারণ করে।

আন্দোলনকারীরা রাস্তা দখল করে রেখেছেন। চাপ বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ। উত্তেজনা মুহূর্তে রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। কিন্তু রিয়াদ বন্দুক তোলেননি, ব্যাটনও চালাননি কারও গায়ে। তাঁর হাতে লাঠি ছিল, কিন্তু সেই লাঠির আঘাত করেছেন শূন্যে—রাস্তার ওপর, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। যেন জানিয়ে দিচ্ছিলেন—আপনারা চলে যান, আমার দায়িত্ব আছে, কিন্তু আপনাদের প্রতি সম্মানও আছে।

এই সম্মান আর মানবিক কৌশলের এক ঝলক দৃশ্য হয়ে ধরা দেয় সেই ঘটনার ভিডিওতে, যা অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শত শত মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করে বলেন—এই রকম পুলিশই তো দরকার আমাদের সমাজে! সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, বিশ্লেষক—সবাই অভিভূত হয়ে পড়েন এক পুলিশ সদস্যের এমন সংযমী, সংবেদনশীল আচরণে।

এমন অভিনব কৌশল আর দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতি এসেছে কিছুটা দেরিতে হলেও, এসেছে সগৌরবে। রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন রিয়াদ হোসেন। এ বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের পদকের তালিকায় তাঁর নামটি জ্বলজ্বল করছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৭ মার্চ যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিনব বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্য রিয়াদ হোসেনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হলো।’

এটা শুধু রিয়াদের জন্য নয়, এটি পুরো পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি বার্তা। সহিংসতা নয়, সংবেদনশীলতাই হতে পারে আইন প্রয়োগের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। আর এই বার্তার একজন জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠলেন রিয়াদ।

অতীতে পুলিশ সপ্তাহেই দেওয়া হতো বিপিএম ও পিপিএম পদক। রিয়াদের বেলায় ব্যতিক্রম ঘটেছে এবার। পুলিশ সপ্তাহের আগেই পেলেন স্বীকৃতি। তবে শেষ পর্যন্ত ভালো কাজ কখনো অন্ধকারে ঢাকা পড়ে না। তারই প্রমাণ রিয়াদের এই সম্মান।

এই পদকের সঙ্গে রিয়াদ পাবেন এককালীন ৭৫ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা। হয়তো সংখ্যাটা বড় নয়, কিন্তু এর মূল্য আত্মমর্যাদার চেয়ে বেশি কিছু নয়। এটি রিয়াদের মতো আরও হাজারো পুলিশ সদস্যকে শেখাবে—ক্ষমতা নয়, মানবতা দিয়েই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হয়।

রাস্তায় লাঠি মেরেছিলেন, কিন্তু কারও গায়ে নয় একটা খুঁটির গায়ে। যেন বলে গিয়েছিলেন—আমি চাই শৃঙ্খলা, কিন্তু চাই না রক্ত। এই একটিমাত্র মুহূর্ত একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পরিণত করেছে একজন নীরব নায়কে।

আবহাওয়া

বৈরী আবহাওয়ার কারণে আগৈলঝাড়ায় ছাতার কারিগরদের ব্যাপক কদর

লাঠিপেটা না করে ছত্রভঙ্গ, রাষ্ট্রপতি পদক পাচ্ছেন সেই পুলিশ কনস্টেবল

প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সচিবালয়ের সামনে ছিল উত্তেজনার ঢেউ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারির সেই দুপুরে শহরের কোলাহল ছাপিয়ে আন্দোলনের স্লোগান ছড়িয়ে পড়ছিল বাতাসে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন দাঁড়িয়ে ছিলেন নিজের কর্তব্যবোধকে ধারণ করে।

আন্দোলনকারীরা রাস্তা দখল করে রেখেছেন। চাপ বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ। উত্তেজনা মুহূর্তে রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। কিন্তু রিয়াদ বন্দুক তোলেননি, ব্যাটনও চালাননি কারও গায়ে। তাঁর হাতে লাঠি ছিল, কিন্তু সেই লাঠির আঘাত করেছেন শূন্যে—রাস্তার ওপর, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। যেন জানিয়ে দিচ্ছিলেন—আপনারা চলে যান, আমার দায়িত্ব আছে, কিন্তু আপনাদের প্রতি সম্মানও আছে।

এই সম্মান আর মানবিক কৌশলের এক ঝলক দৃশ্য হয়ে ধরা দেয় সেই ঘটনার ভিডিওতে, যা অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শত শত মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করে বলেন—এই রকম পুলিশই তো দরকার আমাদের সমাজে! সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, বিশ্লেষক—সবাই অভিভূত হয়ে পড়েন এক পুলিশ সদস্যের এমন সংযমী, সংবেদনশীল আচরণে।

এমন অভিনব কৌশল আর দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতি এসেছে কিছুটা দেরিতে হলেও, এসেছে সগৌরবে। রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন রিয়াদ হোসেন। এ বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের পদকের তালিকায় তাঁর নামটি জ্বলজ্বল করছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৭ মার্চ যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিনব বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্য রিয়াদ হোসেনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হলো।’

এটা শুধু রিয়াদের জন্য নয়, এটি পুরো পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি বার্তা। সহিংসতা নয়, সংবেদনশীলতাই হতে পারে আইন প্রয়োগের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। আর এই বার্তার একজন জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠলেন রিয়াদ।

অতীতে পুলিশ সপ্তাহেই দেওয়া হতো বিপিএম ও পিপিএম পদক। রিয়াদের বেলায় ব্যতিক্রম ঘটেছে এবার। পুলিশ সপ্তাহের আগেই পেলেন স্বীকৃতি। তবে শেষ পর্যন্ত ভালো কাজ কখনো অন্ধকারে ঢাকা পড়ে না। তারই প্রমাণ রিয়াদের এই সম্মান।

এই পদকের সঙ্গে রিয়াদ পাবেন এককালীন ৭৫ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা। হয়তো সংখ্যাটা বড় নয়, কিন্তু এর মূল্য আত্মমর্যাদার চেয়ে বেশি কিছু নয়। এটি রিয়াদের মতো আরও হাজারো পুলিশ সদস্যকে শেখাবে—ক্ষমতা নয়, মানবতা দিয়েই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হয়।

রাস্তায় লাঠি মেরেছিলেন, কিন্তু কারও গায়ে নয় একটা খুঁটির গায়ে। যেন বলে গিয়েছিলেন—আমি চাই শৃঙ্খলা, কিন্তু চাই না রক্ত। এই একটিমাত্র মুহূর্ত একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পরিণত করেছে একজন নীরব নায়কে।