নিজস্ব প্রতিবেদক :
রেলওয়েকে লোকসানের প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, রেলওয়েতে এক টাকা আয় করার জন্য আড়াই টাকার মতো খরচ হয়। দুর্নীতি যাতে কমে এবং অপচয় যাতে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বুধবার (২৬ মার্চ) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে ঢাকা-ভৈরববাজার-ঢাকা রুটের নতুন এক জোড়া কমিউটার ট্রেন উদ্বোধনকালে রেলপথ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, দুর্নীতি কমাতে রেল সচিব ও রেলের মহাপরিচালককে টার্গেট দেওয়া হয়েছে। এক টাকা আয় করতে রেলওয়ের কত টাকা ব্যয় হয়, সেটা তাদের বের করতে বলা হয়েছে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, রেলের অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে সচিব ও মহাপরিচালককে (ডিজি) সুনির্দিষ্ট টার্গেট দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এখন রেলে ১ টাকা আয় করতে যে আড়াই টাকা খরচ হয় তা অবিলম্বে ২ টাকার নিচে নামিয়ে আনতেও বলা হয়েছে।
রেলের লোকসানের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘রেলের লোকসানের আরও একটি কারণ হলো, বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহন। রেলওয়ে সেবার মূল্য অনেক কম। অনেকেই ট্রেনে উঠে ভাড়া দেন না। এইভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে রেলওয়ের সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। লোকসান বাড়লে রেলের সেবা কমানো ছাড়া আমাদের কোন উপায় থাকবে না।’
রেলের দুর্নীতির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, রেলের সচিব এবং ডিজিকে সুনির্দিষ্ট টার্গেট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনিটর করব এক টাকা উপার্জন করতে কত টাকা খরচ হয়। সেটা অবিলম্বে ২ এর নিচে আনতে হবে। এটা করতে হলে বাধ্য হয়ে তাদের দুর্নীতি কমাতে হবে।
লোকোমোটিভ সংকটের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে রেলের লোকোমোটিভ এবং কোচের সংকট আছে। পুরোনো কোচ দিয়ে আমাদের ট্রেন চালাতে হচ্ছে। নতুন কোচ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি। আজ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে চীনে একটি দল যাচ্ছে। সেখানে রেলের কোচ এবং ইঞ্জিনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা তোলা হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া বিনা টিকিটে অনেকে রেল সেবা নিয়ে থাকে। রেল সেবার মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এরপরেও কিছু কিছু এলাকার যাত্রীরা আছেন যারা ভাড়া দেন না। এভাবে চলতে থাকলে রেলওয়ে সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার যদি দেখেন যে, কেউ ভাড়া দিচ্ছে না, তাহলে তাকে আমাদের নজরে আনবেন। আর যদি রেলের লোকসান আরো বেড়ে যায়, তাহলে এটাকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের রেলের সেবা কমানো ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের রেলওয়ে কোচ ও ইঞ্জিনের সঙ্কট রয়েছে। যেগুলো এখন আছে, সেগুলো দিয়ে আমরা চালানোর চেষ্টা করছি। আমরা কোচ ও লোকোমোটিভ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। আজই ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি দল গণচীনে যাচ্ছে। সেখানে কোচ ও লোকোমোটিভ সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করব।
নতুন কমিউটার ট্রেন চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকা ও বড় শহরের বাইরের শহরগুলোর দিকে নজর দিয়েছে। শহরের বাইরের মানুষের যে প্রয়োজন, সেগুলো বোঝার ও প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছি।
এ সময় নরসিংদীর বাসিন্দারা আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ চাইলে রেলপথ উপদেষ্টা বলেন, সবাই নিজের বাড়ির কাছে স্টপের চায়। প্রত্যেকটা স্টপেজে দাঁড়াতে ছাড়তে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে। এখন যদি একটা আন্তঃনগর ট্রেনে দশটা স্টপেজ বাড়ানো হয় তাহলে এক ঘন্টা সময় বেশি লাগবে। এক্ষেত্রে ট্রেনের যাত্রীরা বিরক্ত হবেন। এই জন্য আমরা একটা মিশ্রণ করব। আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজের সংখ্যা কম থাকবে। লোকাল কম্পিউটার ট্রেনে স্টপেজের সংখ্যা বেশি থাকবে।