নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাধীনতার অর্ধশতক বছর পরেও সন্দ্বীপের সঙ্গে কার্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে না ওঠাকে ‘লজ্জার’ বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ রুটে ফেরি চালু হওয়ার কারণে এখন সবাই নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে। যারা শিশু, অসুস্থ, বৃদ্ধ তাদের নিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে।
সোমবার (২৪ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে ফেরি চালু করার পর সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ৫০ বছর পার হয়ে গেলো, শহর-বন্দরসহ সব কিছু চলছে, সন্দ্বীপ যাদের বাড়ি তাদের মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ি যেতে হয়। এটা তারা সহ্য করে যাচ্ছে, এটা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। আজ আমরা সেই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হলাম।
তিনি বলেন, এখানে আরও সুযোগ সুবিধা বাড়বে। এখন সন্দ্বীপ যেতে মানুষ যেন ভয় না করে। এখন শুধু নিজেরা যাবো না, বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে, বিদেশ থেকে যারা আসবে সবাইকে নিয়ে যাবো। সন্দ্বীপের লোক সারা আমেরিকা ঘুরে আসছে, নিউইয়র্কে অসংখ্য সন্দ্বীপের লোক। গর্ব করা উচিত যে, চট্টগ্রাম শহরে যা পাওয়া যায় না, সেটা সন্দ্বীপে পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, সন্দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আপনাদের টিকে থাকতে হয়। আমি এই এলাকারই মানুষ, তাই আপনাদের জীবনযাত্রা আমি কাছে থেকে দেখেছি। সেখানে সরাসরি গাড়ি চলাচলের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে একজন রোগীকে নিরাপদে হাসপাতালে নেওয়া যেত না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সন্দ্বীপকে নৌবন্দর ঘোষণা কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাট উন্মুক্ত করা, ঢাকা-কুমিরা বাস চালু করা, ফেরিঘাট এলাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং নৌপথে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই ছোট ছোট উদ্যোগগুলো সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনবে।
তিনি বলেন, সন্দ্বীপের মানুষ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। আমি আপনাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ উপজেলায় উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আজ এই মাইলফলক অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ৫০ বছরেও যে কাজ হয়নি, আজ খুব কম সময়ে সম্পন্ন করেছেন তারা। ফেরি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় সব কিছু আপনারা করবেন বলে আশা রাখি। এভাবে ভারসাম্যমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সন্দ্বীপ এই অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেবে।
সমাবেশে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দুটি ঘাটের নাম কাল থেকে জুলাই আন্দোলনে সন্দ্বীপের শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকত ও সাইমুন হোসেন মাহিনের নামে নামকরণের প্রস্তাব করছি। বাংলাদেশের কোনো উন্নয়নই ফলপ্রসূ হবে না যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ উন্নত না হয়। এখানে ফেরি চলাচলের আগে নৌঘাট দখলমুক্ত করতে হয়েছে। সমুদ্র উপকূল হওয়ায় ফেরি চালু করা দুরূহ ছিল।
সন্দ্বীপের সন্তান সড়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এই ফেরি চালুর মূল কৃতিত্ব আমাদের প্রধান উপদেষ্টার। গত অগাস্টে প্রথম উনাকে মহিলাদের কাদা মাটি পেরিয়ে পারাপারের কথা বলি।
তিনি বলেন, এটা হতে পারে না। অবশ্যই সমাধান করতে হবে। এটি একটি দুরূহ প্রকল্প কারণ বাংলাদেশে সামুদ্রিক ফেরি চলাচলের অভিজ্ঞতা নেই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।