নিজস্ব প্রতিবেদক :
ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা মহানগরের আয়োজনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি মেনে নেবে না। যাদের কাজ সেনানিবাসে, তারা সেখানেই থাকুন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই না। আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন করেছে তার বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ চাই। সরকারকে বলতে চাই- আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি। এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরূদ একসঙ্গে করা হয় তাও হাসিনার সমান হবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যারা গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে তাদেরকে পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমার-আপনার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলো তাকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এরপর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে, পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয় আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র কাঠামোর বাইরে রেখে। আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ এদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। আপনারা যদি বিচার করতে পারেন আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না। এনসিপি যতদিন আছে আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না, তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ। ৫ আগস্টের পর ভারতের হাতে থাকা আওয়ামী লীগের সুতা আমরা কেটে দিয়েছি।
কিছু প্রশ্ন তুলে হাসনাত বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে রেখে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেন তাদের আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ২০১৪ সালে যখন ৫৩ আসনে ভোট হয়নি তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছিলো তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? ২০২৪ এ ডামি নির্বাচন হলো তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? যেই দেশে ২ হাজার মানুষের রক্তের দাগ শুকায়নি, সেই দেশে আওয়ামী লীগকে ফিরতে দেওয়া যাবে না। যে বাংলাদেশে শাপলা, পিলখানা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিচার, আবরার হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার হয় নাই সেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের সঙ্গে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ইনস্টিটিউটের বিপক্ষে না। আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দেবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেন তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আমরা এখনো কিছুই পাইনি। আপনারা এখনো আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে পারেননি। আপনারা অতি দ্রুত বিচার কাজ শুরু করুন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন।
তিনি বলেন, যেই বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গুম-খুন হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ভারতবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, জুলাই গণহত্যার বিচার হয়নি। সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না। ৫ আগস্টই সিদ্ধান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা, রাজনীতি এ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে।
এসময় ভারতীয় আধিপত্যবাদকে বাংলাদেশে আর কখনো ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আওয়ামী লীগকে আসতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডের জন্যই আওয়ামী লীগ দায় স্বীকার বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। সেই আওয়ামী লীগের পক্ষে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাঁড়ান, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ তার বিপক্ষে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য আমাদের ভাইয়েরা জীবন দেয়নি। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আওয়ামী লীগকে আসতে দেবো না। মুজিববাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে আর পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, ৭ মাস হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কার্যক্রম শুরু করেনি। সরকারের প্রতি আহ্বান, দ্রুত দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কার্যক্রম শুরু করুন। রাজনৈতিকভাবে জুলাই সনদে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা থাকতে হবে।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চলতে দেওয়া যাবে না। অল্প সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। নিবন্ধন বাতিল না করলে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নিবন্ধন বাতিল করিয়ে ছাড়বে।
সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।