Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করের আওতায় আসছেন গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী-চিকিৎসক-আইনজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীরাও করের আওতায় আসছেন। এসব পেশার যারা কর দেওয়ার মতো আয় করছেন, কিন্তু কর দিচ্ছেন না তাদের তালিকা করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গ্রামে অনেকে অনেক আয় করছে বলে ডিসিরা জানিয়েছেন। তারা কিন্তু কর দিচ্ছেন না। আমরা এখন কর সংগ্রহ বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াতে চাই। এ বিষয়ে এনবিআর এখন উদ্যোগ নেবে। তাদের একটি তালিকা ডিসিরা দেবেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রচুর বিক্রি করেন, চিকিৎসক আইনজীবীরা যে ফি নেন, তাদের রশিদ বা ডিজিটাল পেমেন্ট মেথডে এনে তাদেরকেও করের আওতায় আনার উদ্যােগ নেওয়া হবে।

উপদেষ্টা বলেন, দেশের চিকিৎসক-আইনজীবীরা সরাসরি ক্যাশ ট্রানজেকশন করেন। এ কারণে তাদের করের আওতায় আনা যায় না। চিকিৎসকরা যে ফি নেন তার রিসিট তো কোনো মানুষ নেয় না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু তার একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে কিন্তু এগুলো সব রেকর্ডেড। এখানে তাদের (চিকিৎসক) যে অ্যাটেনডেন্ট থাকেন, ফি কালেকশন করেন, তাদের রশিদ দিয়ে ফি নেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার জন্যও এমন ব্যবস্থা করতে হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসিরাই আজ উত্থাপন করেছেন গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অনেক আয় করেন। তখন এনবিআর এ বিষয়টি নিয়ে ড্রাইভ দিতে বলেছে। আমাদের ট্যাক্সের আওতা না বাড়ালে তো হবে না। এমনিতেই তো দাবি থাকে ভ্যাট কমান-ট্যাক্স কমান। সুতরাং ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রেখে ট্যাক্স গ্রহণের পরিধিটা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এই ট্যাক্স নেটটা বাড়িয়ে রাজস্ব আরও বিস্তৃত করতে পারি। মোটকথা জোর করে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে ট্যাক্সের নেট বাড়ানো হবে। আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ কিন্তু কর দেয় মাত্র পাঁচ লাখ।

এছাড়া এ সম্মেলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মসংস্থান বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। সেখানে বাড়ানো সহজ। চীনে গ্রামীণ শিল্পের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ। চীনের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তৈরি হওয়া পণ্য আমেরিকার ওয়ালমার্টেও পাবেন। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই জিনিসগুলো যোগাযোগের অভাবে উঠে আসে না। যোগাযোগ না থাকলে ব্যালেন্স ডেভেলপমেন্টটা করা সম্ভব হবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের ইমেজ কিন্তু বাইরে অনেক বেটার এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো বলে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিন্তু বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পজিটিভ, ফাইনালন্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, রেমিট্যান্স ভালো। বিষয়টা এমন না যে আমরা মরিয়া হয়ে উঠেছি আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণের জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশের ইমেজ (ভাবমূর্তি) কিন্তু বাইরে অনেক বেটার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে কি কোনো নেগোসিয়েশন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ এর সঙ্গে নেগোসিয়েশন হয়েছে তারা একটা বোর্ড…। আমরা বলেছি যে আমাদের কিছু কাজ আছে। অনেকেই ভাবছে আমরা ভিক্ষা করে টাকা পয়সা নিয়ে আসছি। আমরা আমাদের নিজস্ব তাগিদে অনেক কন্ডিশন মেনে আনছি। কিছু শর্ত আছে তারা বললেই আমরা করবো বিষয়টা কিন্তু তা না। আমরা বলেছি আমরা আমাদের মতো করে করবো।

আগামী মার্চ মাসে আইএমএফএর বোর্ড সভায় কী বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব উঠবে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মার্চে না, আমরা বলেছি আমরা একটু অপেক্ষা করবো। জুনে একসঙ্গে দুটো রিভিউ করবো। সেটা আমাদের জন্য বেটার হবে। দ্রুত আমাদের ব্যালেন্স সর্পোটের প্রয়োজন।

এটা কি আমরা চেয়েছি না কী আইএমএফ নিজে থেকে করবে বলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা সাজেস্ট করেছে, তবে আমি বলেছি অনেকগুলো বিষয় আছে যেটা আমরা দ্রুত করতে পারবো না।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এরসঙ্গে বৈঠক হয়েছে সেখান থেকে কী নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইফাদ বাংলাদেশের কৃষিখাত উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে। আমাদের কৃষিখাত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে যে উন্নয়ন দেখেন সেটা তাদের জন্য হয়েছে। তা না হলে আমরা ১৭ কোটি লোককে খাওয়াতে পারতাম না। আমরা তাদের বলেছি এসব খাতে আরও বেশি অর্থায়ন করতে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

করের আওতায় আসছেন গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী-চিকিৎসক-আইনজীবীরা

প্রকাশের সময় : ০১:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীরাও করের আওতায় আসছেন। এসব পেশার যারা কর দেওয়ার মতো আয় করছেন, কিন্তু কর দিচ্ছেন না তাদের তালিকা করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গ্রামে অনেকে অনেক আয় করছে বলে ডিসিরা জানিয়েছেন। তারা কিন্তু কর দিচ্ছেন না। আমরা এখন কর সংগ্রহ বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াতে চাই। এ বিষয়ে এনবিআর এখন উদ্যোগ নেবে। তাদের একটি তালিকা ডিসিরা দেবেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রচুর বিক্রি করেন, চিকিৎসক আইনজীবীরা যে ফি নেন, তাদের রশিদ বা ডিজিটাল পেমেন্ট মেথডে এনে তাদেরকেও করের আওতায় আনার উদ্যােগ নেওয়া হবে।

উপদেষ্টা বলেন, দেশের চিকিৎসক-আইনজীবীরা সরাসরি ক্যাশ ট্রানজেকশন করেন। এ কারণে তাদের করের আওতায় আনা যায় না। চিকিৎসকরা যে ফি নেন তার রিসিট তো কোনো মানুষ নেয় না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু তার একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে কিন্তু এগুলো সব রেকর্ডেড। এখানে তাদের (চিকিৎসক) যে অ্যাটেনডেন্ট থাকেন, ফি কালেকশন করেন, তাদের রশিদ দিয়ে ফি নেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার জন্যও এমন ব্যবস্থা করতে হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসিরাই আজ উত্থাপন করেছেন গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অনেক আয় করেন। তখন এনবিআর এ বিষয়টি নিয়ে ড্রাইভ দিতে বলেছে। আমাদের ট্যাক্সের আওতা না বাড়ালে তো হবে না। এমনিতেই তো দাবি থাকে ভ্যাট কমান-ট্যাক্স কমান। সুতরাং ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রেখে ট্যাক্স গ্রহণের পরিধিটা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এই ট্যাক্স নেটটা বাড়িয়ে রাজস্ব আরও বিস্তৃত করতে পারি। মোটকথা জোর করে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে ট্যাক্সের নেট বাড়ানো হবে। আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ কিন্তু কর দেয় মাত্র পাঁচ লাখ।

এছাড়া এ সম্মেলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মসংস্থান বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। সেখানে বাড়ানো সহজ। চীনে গ্রামীণ শিল্পের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ। চীনের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তৈরি হওয়া পণ্য আমেরিকার ওয়ালমার্টেও পাবেন। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই জিনিসগুলো যোগাযোগের অভাবে উঠে আসে না। যোগাযোগ না থাকলে ব্যালেন্স ডেভেলপমেন্টটা করা সম্ভব হবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশের ইমেজ কিন্তু বাইরে অনেক বেটার এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো বলে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিন্তু বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পজিটিভ, ফাইনালন্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, রেমিট্যান্স ভালো। বিষয়টা এমন না যে আমরা মরিয়া হয়ে উঠেছি আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণের জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশের ইমেজ (ভাবমূর্তি) কিন্তু বাইরে অনেক বেটার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে কি কোনো নেগোসিয়েশন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ এর সঙ্গে নেগোসিয়েশন হয়েছে তারা একটা বোর্ড…। আমরা বলেছি যে আমাদের কিছু কাজ আছে। অনেকেই ভাবছে আমরা ভিক্ষা করে টাকা পয়সা নিয়ে আসছি। আমরা আমাদের নিজস্ব তাগিদে অনেক কন্ডিশন মেনে আনছি। কিছু শর্ত আছে তারা বললেই আমরা করবো বিষয়টা কিন্তু তা না। আমরা বলেছি আমরা আমাদের মতো করে করবো।

আগামী মার্চ মাসে আইএমএফএর বোর্ড সভায় কী বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব উঠবে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মার্চে না, আমরা বলেছি আমরা একটু অপেক্ষা করবো। জুনে একসঙ্গে দুটো রিভিউ করবো। সেটা আমাদের জন্য বেটার হবে। দ্রুত আমাদের ব্যালেন্স সর্পোটের প্রয়োজন।

এটা কি আমরা চেয়েছি না কী আইএমএফ নিজে থেকে করবে বলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা সাজেস্ট করেছে, তবে আমি বলেছি অনেকগুলো বিষয় আছে যেটা আমরা দ্রুত করতে পারবো না।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এরসঙ্গে বৈঠক হয়েছে সেখান থেকে কী নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইফাদ বাংলাদেশের কৃষিখাত উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে। আমাদের কৃষিখাত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে যে উন্নয়ন দেখেন সেটা তাদের জন্য হয়েছে। তা না হলে আমরা ১৭ কোটি লোককে খাওয়াতে পারতাম না। আমরা তাদের বলেছি এসব খাতে আরও বেশি অর্থায়ন করতে।