নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো ঘোষণাপত্র ছিল না। আমরা বলতে চাই, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।
উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ করে হাসনাত বলেন, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আপনারা জেলায় জেলায়, পাড়া-মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন, তারা কী বলতে চায় সে কথাগুলো উঠিয়ে নিয়ে আসবেন।
তিনি বলেন, যারা এখনো ষড়যন্ত্র করছেন তাদের বলতে চাই, আপনাদের ‘আম্মু’ আর দেশে ফিরবে না। যাকে আমরা সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি তাকে আর এ দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হবে না।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমাদের আর কোনো শত্রু নেই। আমাদের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগ। এদের বিরুদ্ধে আমাদের যত ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি আছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা ৩ আগস্ট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এক দফা ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে একে অনেকে মেনে নিতে পারেনি। সেজন্য সচিবালয়ে, পুলিশে, বিচার বিভাগে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলে। আমরা আপনাদের বলতে চাই, আগে ছিল সতীদাহ প্রথা, এখন আমরা দেখছি নথিদাহ প্রথা। যারা সচিবালয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, আপনাদের বলতে চাই, রিয়েলিটি মাইন্যা নেন। আপনাদের আম্মু আর দেশে ফিরবে না। আমরা তাকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি। খুনি হাসিনার আর এদেশে পুনর্বাসন হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, গত ১৬ বছর খুনি হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্যাতন ও নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী যতগুলো শক্তি রয়েছে, আলেম-ওলামাদের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। আমরা যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছি, আমাদের ডাকে সারা বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দ্রব্যমূল্য এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আপনি যদি মনে করেন, বার বার বলতে থাকেন সিন্ডিকেট এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে, তাহলে আপনার কাজ কি? এই সিন্ডিকেটের হাত ভেঙে দিতে হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। কোনো বিপ্লবীকে যদি আক্রমণ করা হয়, এর দায় সরকারকে নিতে হবে।
হাসনাত আরও বলেন, আমরা এখনো পর্যন্ত বিচারবহির্ভুত যে হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে সেগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে পারিনি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দেশপ্রেমী অফিসারদের একজন একজন করে হত্যা করা হয়েছে। অতি শিগগির এই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা শাপলা চত্বরের ঘটনাকে ভুলে যাইনি। সেখানে রাতের অন্ধকারে লাইট নিভিয়ে আলেম-ওলামাদের মেরে ফেলা হয়েছে। আলেম-ওলামাদের এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ যে নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুন করেছে, সেগুলোর বিচার করতে হবে। আমাদের এতদিন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনো ঘোষণাপত্র ছিল না। আমরা বলতে চাই, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে এখনো খুনির দোসররা ঘাঁপটি মেরে আছে। সচিবালয় হোক বা যেকোনো জায়গা থেকে ষড়যন্ত্র করলে আমরা তাদের উৎখাত করে ছাড়বো।
সারজিস বলেন, গোপালগঞ্জে এখনো কীভাবে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা হয়? যদি আমাদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাহলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে আপনাদের আর বসিয়ে রাখবো না। আমরা দেখছি ছাত্রলীগ যুবলীগ এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারা আমাদের আহতদের দেখে মুচকি হাসে। আমরা যদি বিচার করতে না পারি, তাহলে শহীদের আত্মাকে আমাদের জবাব দেওয়ার কিছু থাকবে না।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ঢাকায় আজকের মার্চ ফর ইউনিটিতে আসার সময় সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনো হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে?
এই সমন্বয়ক বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা কেন? শাপলা চত্বরের বিচার কেন আজও হচ্ছে না? সবকিছুতেই আমরা সরকারের তরফ থেকে টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার পতনের পাঁচ মাসেও কেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এই ব্যর্থতার দায় কার? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ইউনূস সরকার যেন সাবধান হয়ে যান।