নিজস্ব প্রতিবেদক :
সীমান্তে দুর্নীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের নীতিগত অবস্থান ছিল আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায়, আমাদের কিছু আর করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ‘গত দুই মাসে সীমান্ত দিয়ে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকছে’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছে তখন নতুন করে আর একজন রোহিঙ্গাকেও ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়েছে। এর মধ্যেও বিভিন্নভাবে নতুন করে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারা কীভাবে ঢুকেছে, কেন তাদের ঢুকতে দেওয়া হলো এসব ব্যাপারে মুখ খুলেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, অনেকটা বাধ্য হয়ে সরকার তাদের ঢুকতে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সীমান্তে দুর্নীতির মাধ্যমেও রোহিঙ্গারা ঢুকেছে।
এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকে পড়ছে। এটা আটকানো খুব কঠিন। আমাদের নীতিগত অবস্থান ছিল আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায়, আমাদের কিছু আর করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঢুকতে দিয়েছি, তাও না। তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছে। আর একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রচুর দুর্নীতি আছে সীমান্তে। এটা সত্য, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে তারা ঢুকছে। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। একটা সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে, বিষয়টি এমনও না, বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকছে। এটাকে আটকানো খুব কঠিন হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নতুন ঢলের শঙ্কা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি না, আরও একটি ঢল আসবে। যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন। এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে। তবে সেই ঢলকে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন বয়স্ক যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তারা হয়ত পরিস্থিতি মেনে নেবেন। তবে আগামী পাঁচ বছর পর যেসব তরুণ রোহিঙ্গা, যাদের বয়স ২০ বছর হবে, ডেস্পারেট হয়ে যাবে, তখন আমাদের সমস্যা বেশি হবে, প্রত্যেকেরই হবে। রোহিঙ্গারা এখন অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংককে মিয়ানমারের সাথে সীমানা থাকা পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ইনফরমাল কনসালটেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যরা সমাধান না হলে মিয়ানমারে শান্তি ফিরে আসবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী এক দশক পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাতে আঞ্চলিক সব দেশই ক্ষতির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা, অপরাধ ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, লাওস, চীন, থাইল্যান্ড যুক্ত ছিল।