নিজস্ব প্রতিবেদক :
হাসিনা সরকারের আমলে গত বছরের (২০২৩-২০২৪ অর্থবছর) তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকারের আগস্ট-নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স ২৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনর পতনের পর দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২৬ শতাংশ। প্রবাসীরা উজাড় করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে চলেছেন। তারা আমাদের দেশ গড়ার মূল চালিকা শক্তি। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রবাসীদের সব সমস্যা দূর করতে কাজ করছে। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে দেশ থেকে রেমিটেন্সের মাধ্যমে আসা লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যে হতাশা চলে এসেছিল।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ তারা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করলে আমাদের খুব কষ্ট লাগে। প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে। তাদের সবচেয়ে পছন্দ ইসলামী ব্যাংক। সেই ইসলামী ব্যাংক হাসিনা সরকার দখল করে লুটপাট করেছে। হাজার হাজার টাকা পাচার করেছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ভোটাধিকার নিশ্চিতের বিষয়টি পুরোটা কমিশনের ব্যাপার। আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করবো।
প্রবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে অনোক অভিযোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আছে। আসলে পাসপোর্ট আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো বিষয় না। তবে এবিষয়ে আমি অনেক বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি। একাজটি করতে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এরমধ্যে ১৫ ডিসেম্বর থেকে সৌদিআরবে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশেও দেয়া হবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অল্প কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউন্স হয়েছে। প্রবাসীরা সেটা পছন্দ করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সরাসরি টাকা পাঠানো যাচ্ছে। রেমিট্যান্সের উর্ধ্বসীমা তুলে দেয়া সেটা করা হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে প্রবাসীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। অনেককে জেলে পাঠানো হয়েছিলো। তারপর প্রধান উপদেষ্টা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আমরা তাদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের নিদিষ্ট অঙ্কের টাকা দিচ্ছি। বোয়েসেলে মাধ্যমে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো।
প্রবাসীখাতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এখাতে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অভিবাস ব্যয় কমানো।
এজন্য বায়রাতে একটা প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করছি। দ্বিতীয়, আমাদের দক্ষ শ্রমিক কম যায়। সেজন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে সৌদি আরবে দক্ষকর্মী পাঠকনোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে ইন্টিগ্রেশন। এজন্য প্রবাসী ব্যংকের মাধ্যমে কাজ করবো। চতুর্থ সমস্যা দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীদের হয়রানি শিকার হতে হয়। সেটা দূর করার চেষ্টা করছি।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে দীর্ঘ দিনের দাবি ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়ার জন্য আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা দেয়ার দরকার সেটা করবো। যদিও এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তারা সব সময় টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা আছে সেগুলো বলেন। তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আজকে আমরা নতুন বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সরকার পতন ও ফ্যাসিবাদের পতনের পর প্রবাসী দিবস পালন করছি। দেশে যারা আন্দোলন করেছে তাদেরকে দমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছিলো। তখন প্রবাসী ভাইয়েরা আন্তর্জাতিকভাবে ভয়েস ক্রিয়েট করেছেন। লুটপাটের ফলে সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। তারা নানাভাবে প্রবাসীদের দমনের চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, যুব ক্রিয়া মন্ত্রণালয় একটি ইন্টিগ্রেটর প্লাটফর্ম করছি। সেখানে প্রবাসী যে সকল ভাইয়ের বাংলাদেশে ফিরে এসে কাজ করতে চান, যারা বিদেশে পড়াশোনা করছেন বা কাজ করছেন, সেখানে তাদের সিভি দেয়া থাকবে। এজন্য দেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহবান জানাবো আপনারা বিভিন্ন কাজে বাইরে থেকে লোক না এনে আমাদের দেশের অভিজ্ঞ লোকদের যারা বাইরে পড়াশোনা করেছে তাদেরকে বিভিন্ন কাজে হায়ার করতে পারেন।
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিতে চাই উল্লেখ করে আসিফ ভূঁইয়া বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন যোগ্য রূপরেখা যেন নির্বাচন কমিশন প্রণয়ণ করে। যারা পরিবার পরিজন থেকে দূরে থেকে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা যেন ভোটাধিকার পান সেটা নিশ্চিত করার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সেই আহবান থাকবে আমাদের নির্বাচন কমিশন ও সংস্কার কমিশনের কাছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেখানে আপনারা মতামত দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যাতে করে আপনাদের চিন্তা চেতনার প্রতিফল ঘটে। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি মধ্যমে যাতে না পড়ে সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “প্রবাসীর অধীকার, আমাদের অঙ্গীকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ আমাদের সবার”। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এসময় ৮ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি চেক প্রদান, শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ১০ ব্যাংককে রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১৪ জনকে রেমিট্যান্সে খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সিআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কর্মী ফজিলা আক্তার, সৌদি প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এনআরবির সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী, আইএমও এর প্রতিনিধিসহ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, প্রবাসীরা।